Biography - Jagadish Chandra Ghosh

গীতাশাস্ত্রী জগদীশচন্দ্র ঘোষের সংক্ষিপ্ত জীবনী


'মনুষ্যমধ্যে গীতা-ব্যাখ্যাতা অপেক্ষা আমার অধিক প্রিয়কারী আর কেহ নাই এবং পৃথিবীতে তাহা অপেক্ষা আমার অধিক প্রিয় আর কেহ হইবেও না ।' - গীতা ১৮|৬৯







(1872-1958)


সূচিপত্র

1) ভূমিকা
2) প্রথম জীবন
3) অক্ষয় কীর্তি
4) শেষ জীবন
5) পুত্র শ্রীঅনিলচন্দ্র ঘোষ
6) "শ্রীগীতা" - অভিমত
7) "শ্রীকৃষ্ণ ও ভাগবত ধর্ম" - অভিমত


1) ভূমিকা

জগদীশচন্দ্র মনস্বী শিক্ষাবিদ্‌ ও পরমভক্ত ছিলেন । দেশপ্রীতি ও ভগবৎপ্রেম তাঁহার জীবনে একই সূত্রে অনুস্যূত ছিল । তিনি আজীবন নীরবে শিক্ষা ও ধর্মের সেবা করিয়া গিয়াছেন । জগদীশচন্দ্রের অক্ষয়কীর্তি "শ্রীগীতা", "শ্রীকৃষ্ণ ও ভাগবত ধর্ম", "ভারত-আত্মার বাণী", "আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ" প্রভৃতি গ্রন্থ ।


2) প্রথম জীবন

পুণ্যপুরূষ জগদীশচন্দ্র ঘোষ ১২৭৯ সালের ১৫ই পৌষ জন্ম গ্রহণ করেন । ঢাকা জেলায় মানিকগঞ্জ-মহকুমায় দাশরা গ্রামে তাঁহার পৈতৃক বাস ছিল । তাঁহার পিতার নাম কৃষ্ণচন্দ্র ঘোষ এবং মাতা গোলকমণি ঘোষ । তিনি মানিকগঞ্জ-মহকুমার আটিগ্রাম-নিবাসী কৃষ্ণচন্দ্র গুহ রায় মহাশয়ের একমাত্র কন্যা বিধুমুখীর সহিত পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন ।

মানিকগঞ্জ হাই স্কুল হইতে জগদীশচন্দ্র ১৮৯১ খ্রীস্টাব্দে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া ঢাকা কলেজ হইতে বি.এ. পাশ করেন । ইহার পর ঢাকা কলেজেই আইন পড়েন, কিন্তু আইন পরীক্ষা আর দেন নাই । এই সময় তিনি ত্রিপুরা জেলার হরিণা-চালিতাতলী হাই স্কুলে হেড্‌মাস্টার হইয়া যান । ইহার পর তিনি ঢাকা জেলার বেলতলী, তেঘরিয়া প্রভৃতি হাইস্কুলে প্রধান-শিক্ষকতা করেন । এই সময় শ্রবণশক্তি ক্ষীণ হওয়ায় তেঘরিয়া হাইস্কুল থেকেই তিনি শিক্ষকতা ছাড়িয়া দেন 


3) অক্ষয় কীর্তি

১৯১৪ খ্রীস্টাব্দে ঢাকা শহরে তাঁহার স্থাপিত 'প্রেসিডেন্সী লাইব্রেরী' আজও কতকগুলি উৎকৃষ্ট গ্রন্থ প্রচার করিয়া শিক্ষাবিস্তারে এবং সৎসাহিত্য প্রচারে সহায়তা করিতেছে । এই প্রকাশালয় স্থাপনের পূর্ব হইতেই জগদীশচন্দ্র গ্রন্থ রচনা করিতেছিলেন ।


তিনি একজন নিষ্ঠাবান্‌ 'স্বদেশী' ছিলেন । তিনি যৌবনে "A Book for the Swadeshi" নামক একখানা ইংরেজী গ্রন্থ লিখিয়াছিলেন, উহা ইংরেজ-সরকার নিষিদ্ধ ও বাজেয়াপ্ত করে । স্বদেশী আন্দোলনের সময় হইতে তাঁহার বাড়িতে স্বদেশী বস্ত্র ভিন্ন কোন বিদেশী বস্ত্র ঢুকিতে পারে নাই । অসহযোগ আন্দোলনের ঠিক পূর্বে লোকমান্য বালগঙ্গাধর তিলকের মৃত্যুর পর তাঁহার নিন্দা করায় যখন স্টেট্‌স্‌ম্যান কাগজ বয়কট হইল, সেই সময় হইতে মৃত্যুকাল পর্যন্ত তিনি অমৃতবাজার পত্রিকার নিরবিচ্ছিন্ন পাঠক ছিলেন । বৃদ্ধ বয়সেও তিনি এত পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পত্রিকা পড়িতেন এবং তাঁহার এত প্রখর স্মরণশক্তি ছিল যে, তিনি যুদ্ধাদির ঘটনা আদ্যন্ত মুখে মুখে বলিতেন ।

জগদীশচন্দ্র গীতা ব্যাখ্যার জন্য এদেশে চিরস্মরণীয় হইয়া রহিবেন । বাংলা ১৩৩২ সালে তাঁহার "শ্রীগীতা" প্রথম প্রকাশিত হয় । ধর্মসাহিত্যে যেমন "শ্রীগীতা" তাঁহার অমর কীর্তি, স্কুলপাঠ্য গ্রন্থেও "আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ" তাঁহার অক্ষয় দান । এছাড়াও তাঁহার রচিত গ্রন্থের মধ্যে "শ্রীকৃষ্ণ ও ভাগবত ধর্ম", "ভারত-আত্মার বাণী" ("Soul of India Speaks"), "কর্মবাণী", "শিক্ষার্থীর ধর্মশিক্ষা", "ছাত্রবোধ বাংলা ব্যাকরণ", "মাতৃভাষা" প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য । মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্তও তাঁহার শেষ গ্রন্থ "Soul of India Speaks"এর শেষ প্রুফগুলি তিনি দেখিয়া গিয়াছেন । এই গ্রন্থখানি তাঁহার মৃত্যুর অব্যবহিত পরই প্রকাশিত হয় । সপ্তাশীতিবয়স্ক বৃদ্ধ বিনা চশমায় পত্রিকা পড়িতেন এবং গ্রন্থাদি রচনা করিতেন ।

তাঁহার এই সকল গ্রন্থের মধ্যে "শ্রীগীতা" ও "শ্রীকৃষ্ণ" সর্বত্র সমাদর পাইয়াছে । "শ্রীগীতা"র এমন অসাম্প্রদায়িক সর্বজনবোধ্য প্রাঞ্জল ব্যাখ্যা বাংলা ভাষায় আর নাই । এই গ্রন্থখানির প্রথম সংস্করণ, তিনি তিন বছরে ছাপিয়া বাহির করেন । শীতের সময় লাইব্রেরীর কাজের চাপ পড়িত, এইজন্য এই সময়ে লেখা ও ছাপা বন্ধ থাকিত । তাঁহার বই লেখার বিশেষত্ব ছিল, তিনি লিখিতেন ও সঙ্গে সঙ্গে প্রেসে দিতেন, একেবারে সম্পূর্ণ বই লিখিয়া প্রেসে দিতে পারিতেন না । ছাপার সঙ্গে সঙ্গে লেখা অগ্রসর হইত । পরবর্তী সংস্করণে "শ্রীগীতা" সম্পূর্ণ পরিবর্ধিত আকারে প্রকাশিত হয় । 

"শ্রীকৃষ্ণ ও ভাগবত ধর্ম"এ শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব ও শ্রীকৃষ্ণলীলা একাধারে আদ্যন্ত শাস্ত্র-প্রমাণসহ আলোচিত হয়েছে । বঙ্কিমচন্দ্রের  (কৃষ্ণচরিত্রপর শ্রীকৃষ্ণবিষয়ক এরূপ সর্বাঙ্গীণ আলোচনা বাংলা ভাষায় আর হয় নাই ।

"কর্মবাণী" ও "শিক্ষার্থীর ধর্মশিক্ষা" - তাঁহার এই দুইটি ছোট বই তরুণদের জন্য লিখিত । দ্রঢ়িষ্ঠ, বলিষ্ঠ, কর্মঠ, আদর্শ জীবন গঠনের সহায়ক "কর্মবাণী"র মত এরূপ আখ্যায়িকাবহুল উপদেশমূলক বই বাংলায় বিরল । "শিক্ষার্থীর ধর্মশিক্ষা"য় অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গীতে হিন্দুধর্মের মূলসূত্রের পরিচয় লিখিত হইয়াছে ।


4) শেষ জীবন

জগদীশচন্দ্র তাঁহার ধর্মগ্রন্থাদির লভ্যাংশের কিয়দংশ দানাদি কার্যে ব্যয় করিতেন । শেষ কয় বছর প্রতি বছর পূজার সময়ে দুঃস্থ পরিবারে শাড়ী, ধুতি, জামা, চাউল, ডাল ও অর্থ দান করিতেন । 

তিনি চিরিকালই নিয়মিত জীবন যাপন করিতেন । তাঁহার আহার ও চাল-চলন অত্যন্ত সাধারণ ছিল । দীর্ঘকাল যাবৎ তিনি একবেলা ভাত খাইতেন এবং রাত্রিতে রুটি, দুধ, খই, ফল ইত্যাদি খাইতেন । তিনি সকালে বিকালে ঢাকা বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে বেড়াইতেন । ঢাকা শহরেই তাঁহার জীবনের অধিকাংশ বৎসর কাটিয়াছে । ১৯৫০ সালে ঢাকার দাঙ্গার পর তাঁহাকে কলিকাতায় আনা হয় ।

কলিকাতা আসিয়াও রবীন্দ্র সরোবরের (ঢাকুরিয়া লেকের) পাড়ে তাঁহার বেড়াইবার অভ্যাস অব্যাহত ছিল । মৃত্যুকাল পর্যন্তও তিনি সুস্থ ও সচল ছিলেন । তিনি গুরুতর অসুখে ভুগেন নাই । শেষের দিকে তিনি কানে মোটেও শুনিতেন না, কাগজে বা শ্লেটে লিখিয়া তাঁহার সহিত আলোচনা করিতে হইত ।

তিনি বিছানায় শুইয়া বা হেলান দিয়া পড়াশুনা করিতেন এবং গ্রন্থ রচনা করিতেন । টেবিল-চেয়ারে বসিয়া বই খুব কমই লিখিয়াছেন । শ্রবণশক্তি নষ্ট হওয়ায় তাঁহার সমস্ত কার্যেই গভীর অভিনিবেশ ও অন্তর্দৃষ্টি ছিল । তাঁহার ধৈর্য ও ভগবৎ-নির্ভরতা অসাধারণ ছিল । তিনি কোন বিপদে বিচলিত হইতেন না । কানে শুনিতেন না বলিয়া তিনি কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে যাইতেন না । তাঁহাকে অলসভাবে সময় কাটাইতে দেখা যায় নাই । সর্বদাই বই বা পত্রিকার মধ্যে ডুবিয়া থাকিতেন । ইংরেজী দৈনিক পত্রিকা পড়া তাঁহার প্রাত্যহিক কাজ ছিল । লোকের সহিত তাঁহার ব্যবহার বড় মধুর ছিল । তাঁহার মুখে শিশুর মত সরল দিব্য হাসি ছিল । শ্বেত-শ্মশ্রু-শোভিত মুখখানি ঋষির মতো দেখাইত ।

১৩৬৫ সালের ১৫ই পৌষ বুধবার (ইংরেজী ৩১শে ডিসেম্বর, ১৯৫৮ সাল) রাত্রি ৯:১৫ মিনিটে কলিকাতা ৪১ গড়িয়াহাট রোডস্থ বাসভবনে থ্রম্বোসিস্‌ রোগে আক্রান্ত হইয়া তিনি পরলোক গমন করেন । মৃত্যুকালে তাঁহার বয়স ৮৭ বৎসর পূর্ণ হইয়াছিল । জগদীশচন্দ্রের জন্ম ও মৃত্যুর তারিখ একই ।


5) পুত্র শ্রীঅনিলচন্দ্র ঘোষ

তাঁহার সুযোগ্য পুত্র সুলেখক শ্রীঅনিলচন্দ্র ঘোষ, এম্‌.এ. তাঁহার প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার । অনিলবাবু যৌবনে বৈপ্লবিক আন্দোলনে দীর্ঘকাল রাজবন্দী ছিলেন । পিতা বৃদ্ধ, পুত্র বন্দী, ইংরেজ সরকারের নির্যাতনে জগদীশচন্দ্রের প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত বিপন্ন হয় । অনিলবাবু কারামুক্ত হইয়া এই পতনোন্মুখ প্রতিষ্ঠানকে উন্নতির পথে পরিচালিত করেন । মৃত্যুর বহু পূর্বেই জগদীশচন্দ্র তাঁহার বৈষয়িক ও জনহিতকর কার্যের ভার তাঁহার পুত্রের উপর ন্যস্ত করেন । অনিলবাবুর "ব্যায়ামে বাঙালী", "বীরত্বে বাঙালী", "বিজ্ঞানে বাঙালী", "বাঙলার ঋষি", "বাঙলার বিদুষী" প্রভৃতি গ্রন্থ দীর্ঘকাল যাবৎ আমাদের ছেলেমেয়েদের আদর্শ জীবন গঠনে প্রেরণা দিতেছে । এই প্রকাশনী-সংস্থায় অনিলবাবুর সহধর্মিণী শ্রীমতী নীলিমা ঘোষ এম.এ.,বি.টি.'ও সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন । তাঁহার লেখা "মানুষের মতো মানুষ", "সাহিত্যের গল্প", "ছোটদের গল্পগুচ্ছ" প্রভৃতি ছেলেমেয়েদের বই উল্লেখযোগ্য ।


6) "শ্রীগীতা" - অভিমত (সংক্ষিপ্ত)


6.1) আনন্দবাজার পত্রিকা - 

জগদীশবাবুর গীতাখানি দীর্ঘকাল যাবৎ বাঙ্গালী পাঠকগণকে গীতার মর্ম ও মাধুর্য আস্বাদনে সহায়তা করিয়া আসিতেছে । প্রাঞ্জল অথচ পাণ্ডিত্যপূর্ণ ব্যাখ্যা । গ্রন্থখানা সাধারণ পাঠকগণের পক্ষে যেমন উপযোগী হইয়াছে, তেমনি সুশিক্ষিত পাঠকগণ উহা পাঠে পরিতৃপ্তি লাভ করিতে পারিবেন । গ্রন্থকার পণ্ডিত ও শাস্ত্রদর্শী । আমরা প্রত্যেক স্বধর্মনিষ্ঠ হিন্দুকে এই গ্রন্থ ক্রয় করিতে অনুরোধ করি ।

6.2) দেশ - 

জগদীশবাবুর গীতাখানি সর্বশ্রেণীর পাঠকের নিত্য পাঠযোগ্য হইয়াছে । সাধারণ পাঠকদের জন্য প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য গীতাব্যাখ্যাকারীদের মত ও আলোচনাসহ 'গীতার্থ-দীপিকা' নামে একটি পাণ্ডিত্যপূর্ণ ব্যাখ্যা দেওয়া হইয়াছে । বিস্তৃত ভূমিকায় গীতা-সম্পর্কিত বহু জ্ঞাতব্য তথ্য স্থান পাইয়াছে । গীতাধ্যায়ীদের নিকট বইখানা অপরিহার্য বলিয়াই আমরা মনে করি ।


6.3) প্রবর্তক -

বাজারে প্রচলিত গীতার বহু সংস্করণের মধ্যে 'জগদীশ ঘোষের গীতা' এই নাম জানে না এমন শিক্ষিত লোক খুব কমই আছেন । গ্রন্থকার প্রাচীন ও আধুনিক, প্রাচ্য ও প্রতীচ্য গীতা-ব্যাখ্যাতৃগণের আলোচনা নিরপেক্ষ ভাবে পাঠকদের সামনে উপস্থিত করিয়াছেন ।

6.4) যুগান্তর -

গীতার সুসম্পাদিত সংস্করণ । শঙ্কর, শ্রীধর হইতে তিলক, অরবিন্দ পর্যন্ত প্রাচীন ও আধুনিক গীতাচার্যগণের মত বিশদভাবে ইহাতে আলোচিত হইয়াছে । গীতা বুঝিবার পক্ষে একান্ত প্রয়োজনীয় সাংখ্যবেদান্তাদি শাস্ত্রের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ও দার্শনিক পরিভাষা প্রভৃতির সংক্ষিপ্ত পরিচয় গ্রন্থখানিকে আকর্ষণীয় করিয়াছে । এরূপ প্রাঞ্জল টীকা-টিপ্পনী-ভাষ্য-রহস্যাদি গীতা-সাহিত্যে অধিক নাই । ভূমিকায় সনাতন ধর্মের পরিচয়, সমন্বয়বাদ, গীতার মূল শিক্ষা প্রভৃতি বিবিধ বিষয়ের আলোচনা আছে ।

6.5) দৈনিক বসুমতী -

প্রত্যেকটি শ্লোককে সহজবোধ্য করিবার জন্য শ্রীগীতায় উহার ভাষ্যমুখে অন্যয়, কঠিন শব্দের ব্যাখ্যা ও সহজ ভাষায় উহার তাৎপর্য বিশ্লেষণ করা হইয়াছে । সংস্কৃত যাঁহারা ভাল জানেন না, তাঁহাদের কাছেও পুস্তকখানি সহজবোধ্য ।

6.6) উদ্বোধন -

গ্রন্থখানি অল্প সংস্কৃতজ্ঞ অথচ তত্ত্বানুসন্ধিৎসু ব্যক্তিগণের পক্ষে যে বেশ উপাদেয় হইয়াছে সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নাই । সর্বান্তঃকরণে ইহার বহুল প্রচার কামনা করি । ভূমিকায় প্রদত্ত সুচিন্তিত আধ্যাত্মিক ও ঐতিহাসিক তত্ত্বের আলোচনা বুদ্ধিজীবিগণের বিচার-সৌকর্য সাধন করিবে ।

6.7) উজ্জ্বল ভারত -

গ্রন্থখানি নিজের মধ্যে নিজে পূর্ণ - ইহা জনসমাজে বিশেষ সমাদর লাভ করিয়াছে - প্রাচীনের চিন্তাধারা এই গ্রন্থখানির ভিতর দিয়া নবীনের ছাঁচে গড়িয়া উঠিবার সুযোগ পাইয়াছে বলিয়াই এই গ্রন্থের এতটা প্রসার সম্ভবপর হইয়াছে । গ্রন্থখানি সফল হইয়াছে । ইহার আরও প্রচার কামনা করি ।


6.8) শ্রীসুদর্শন পত্রিকা - 

গ্রন্থকারের অসাধারণ পাণ্ডিত্য ও সাধনা গীতার গোপন রহস্যের উপর যে আলোকপাত করিয়াছে তাহাতে সুধী পাঠকবৃন্দ চমৎকৃত না হইয়া পারিবেন না । স্বধর্মনিষ্ঠ প্রত্যেক গীতাধ্যায়ী ব্যক্তির পক্ষে এই গ্রন্থখানি অপরিহার্য বললেও অত্যুক্তি হয় না ।


6.9) Amrita Bazar Patrika -

A notable feature of Jagadish Babu's Geeta is the author's inimitable method of presentation which makes the most abstruse points easily intelligible. It is very helpful for a thorough grasp of Geeta. Indeed the work is a store-house of ancient knowledge.


6.10) Hindustan Standard -

The author seems to have spared no pains to make the Gita understandable to the common reader. The discussions will enable the reader to make his way with mysteries of the Gita.


6.11) Advance -

His method of treatment is very attractive - consummate skill of presentation with a lucidity all its own.


6.12) শ্রীমৎ মহানামব্রত ব্রহ্মচারী -

গীতার মর্ম উদ্ঘাটন করতে যদি লালসা থাকে তবে জগদীশচন্দ্রের "শ্রীগীতা" পাঠ করুন । "শ্রীগীতার" অপূর্ব বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যান জগদীশচন্দ্রের অক্ষয় কীর্তি । তাঁর "শ্রীগীতা" ভারতীয় জাতীয় সম্পদ । যেমন কবি কৃত্তিবাসের রামায়ণ, কাশীরামদাসের মহাভারত, কালীসিংহের মহাভারত, সেইরূপ বাংলাভাষায় শ্রীজগদীশচন্দ্রের "শ্রীগীতা" । যতদিন বাংলাভাষা থাকবে, ততদিন থাকবে জগদীশচন্দ্রের "শ্রীগীতা" আর জগদীশচন্দ্র থাকবেন অমর হয়ে বাঙালীর হৃদয়-মন্দিরে । জগদীশচন্দ্র কেবল "শ্রীগীতা"র আলোচনাই করেননি । এই মহাগ্রন্থ নিয়ে তিনি করেছেন জীবনব্যাপী কঠোর সাধনা । আর সেই সাধনায় তিনি সিদ্ধিলাভ করেছেন । গীতার একখানি ইংরেজী সংস্করণও (১৯৭২ সালে জগদীশচন্দ্রের জন্মশতবার্ষিকী বৎসরে) তাঁহার সুযোগ্য পুত্র শ্রীঅনিলচন্দ্র প্রকাশ করেছেন । পুণ্যপুরুষ জগদীশচন্দ্র তাঁর গীতার সঙ্গেই অমর হয়ে আছেন । তাঁর কীর্তির মতই তিনিও চিরজীবি ।


6.13) শ্রীত্রিপুরাশংকর সেনশাস্ত্রী (জগদীশচন্দ্রের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে একটি প্রবন্ধে) -

আচার্য জগদীশচন্দ্রের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে - তিনি স্বচ্ছ ও সংস্কারমুক্ত দৃষ্টি নিয়ে সনাতনধর্মের ক্রমবিকাশের ধারা অনুসরণ করেছেন, ভারত ধর্মে ভাগবতধর্মের যথাযথ স্থান নির্দেশ করেছেন । ... জগদীশচন্দ্র ছিলেন নীরব স্বদেশপ্রেমিক । তিনি চেয়েছিলেন, ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ভিত্তিতে এক বীর্যবান, প্রজ্ঞাবান, মেধাবান ও শক্তিমান জাতি গড়ে তুলতে । তাঁর সাহিত্য-সাধনার মূল উৎসাহও ছিল এই স্বদেশপ্রেম ।


7) "শ্রীকৃষ্ণ ও ভাগবত ধর্ম" - অভিমত (সংক্ষিপ্ত)


7.1) আনন্দবাজার পত্রিকা -

বঙ্কিমচন্দ্রের পরে আজ পর্যন্ত শ্রীকৃষ্ণ-জীবন বিবৃত করিয়া বঙ্গভাষাতে যত গ্রন্থ লেখা হইয়াছে এই 'শ্রীকৃষ্ণ' গ্রন্থখানাকে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ স্থান দেওয়া যাইতে পারে । লেখক গ্রন্থখানাকে অপূর্ব রসমধুর করিয়া তুলিয়াছেন । এই গ্রন্থ একাধারে ধর্ম ও দর্শন গ্রন্থ ।

7.2) দেশ -

জগদীশবাবু লব্ধপ্রতিষ্ঠ গীতা-ব্যাখ্যাতা । তাঁহার এই গ্রন্থে তিনি ভক্তির দৃষ্টিতে, প্রেমের দৃষ্টিতে শ্রীকৃষ্ণ ও ভাগবত ধর্ম বুঝাইবার চেষ্টা করিয়াছেন । এই গ্রন্থখানা আশা করি শীঘ্রই রসিক ও ভক্ত সমাজে অবিচলিত আসন লাভ করিবে । গ্রন্থখানা মধুর রসের আকর । বৈষ্ণব-অবৈষ্ণব সকলকেই আমরা গ্রন্থখানা পাঠ করিতে অনুরোধ করি ।


7.3) যুগান্তর -

গীতা-সম্পাদক লিখিত এই বইখানি নানাভাবেই বৈচিত্র্যপূর্ণ । অতি নিপুণতার সহিত শ্রীকৃষ্ণ-লীলা ও তত্ত্বের ব্যাখ্যা করিয়াছেন । আলোচনা পাণ্ডিত্যপূর্ণ ও চিত্তাকর্ষক । গ্রন্থখানি ভক্ত, জ্ঞানী, তত্ত্ব-জিজ্ঞাসু, সকলের নিকটেই আদরণীয় হইবে ।


7.4) প্রবর্তক -

রসঘন বিশুদ্ধ মাধুর্য-বিগ্রহ কৃষ্ণচন্দ্র ও মহাভাবময়ী শ্রীমতী রাধার রস-বিলাস বর্ণনা প্রসঙ্গে ভক্তিমান্‌ গ্রন্থকার যে অভিনিবেশের পরিচয় দিয়াছেন তাহাতে আমরা মুগ্ধ হইয়াছি ।

7.5) শ্রীমৎ মহানামব্রত ব্রহ্মচারী -

জগদীশচন্দ্রের আর একখানি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ 'শ্রীকৃষ্ণ ও ভাগবতধর্ম' । এই গ্রন্থে একাধারে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের তত্ত্ব ও লীলার সুন্দর প্রাণস্পর্শী আলোচনা করেছেন কৃষ্ণনিষ্ঠাপ্রাণ গ্রন্থকার জগদীশচন্দ্র । সবই শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা । এই গ্রন্থকে "শ্রীগীতা"র পরিপূরক গ্রন্থ বলা যাইতে পারে । বাংলা ভাষায় এইরূপ আলোচনা বিরল । কৃষ্ণানুরাগ-ভরা ব্যাখ্যানে সচ্চিদানন্দের প্রেমতত্ত্ব জীবন্ত হয়ে উঠেছে ।

_________________________________________
Hard Copy Source:

"Sri Gita" or "Srimadbhagabadgeeta" by Gitashastri Jagadish Chandra Ghosh & Anil Chandra Ghosh. 26th Edition - June 1997 (1st Edition, 1925 from Dhaka now in Bangladesh). Published by Subhadra Dey (Ghosh), Presidency Library, 15 Bankim Chatterjee Street, Kolkata-700073. Printed by Web Impressions Pvt.Ltd., 34/2 Beadon Street, Kolkata-700006.

Online Reference:
"Krishna Charitra" by Sri Bankim Chandra Chattopadhyay. Board Edition, Edited 12th Print 1994 (First Edition 1875). Also Bankim Rachanabali, unicode compliant electronic edition provided by Society for Natural Language Technology Research.

Image taken from official website of Presidency LibraryKolkata

Contents with numbering added by rk for clarity.

Disclaimer:
This site is not officially related to Presidency LibraryKolkataThis is a personal, non-commercial, research-oriented effort of a novice religious wanderer.
এটি আধ্যাত্মিক পথের এক অর্বাচীন পথিকের ব্যক্তিগত, অবাণিজ্যিক, গবেষণা-ধর্মী প্রয়াস মাত্র ।

No comments:

Post a Comment