অর্জুন কহিলেন -
হে পুরুষোত্তম, সেই ব্রহ্ম কি ? অধ্যাত্ম কি ? কর্ম কি ? অধিভূত কাহাকে বলে আর অধিদৈবই বা কাহাকে বলে ? অধিযজ্ঞ কি ? এ দেহে তিনি কি প্রকারে চিন্তনীয় ? হে মধুসূদন, অন্তকালে সংযতচিত্ত ব্যক্তিগণ কিরূপে তোমাকে জানিতে পারেন ? ১,২
শ্রীভগবান্ কহিলেন -
পরম অক্ষর যে বস্তু তাহাই ব্রহ্ম; স্বভাবই অধ্যাত্ম বলিয়া উক্ত হয় । তার ভূতগণের উৎপত্তিকারক যে দ্রব্যত্যাগ-রূপ যজ্ঞ (অথবা মতান্তরে সৃষ্টি ব্যাপার) তাহাই কর্মশব্দ বাচ্য । ৩
হে নরশ্রেষ্ঠ ! বিনাশশীল দেহাদি বস্তুই অধিভূত; পুরুষই অধিদৈবত । এই দেহে আমিই অধিযজ্ঞ । ৪
যিনি অন্তকালেও আমাকে স্মরণ করিতে করিতে দেহ ত্যাগ করিয়া প্রস্থান করেন, তিনি আমারই ভাব প্রাপ্ত হন, ইহাতে সংশয় নাই । ৫
যিনি যে ভাব স্মরণ করিতে করিতে অন্তকালে দেহত্যাগ করেন, হে কৌন্তেয়, তিনি সর্বদা সেই ভাবে তন্ময়চিত্ত থাকায় সেই ভাবই প্রাপ্ত হন । ৬
অতএব সর্বদা আমাকে স্মরণ কর এবং যুদ্ধ কর (স্বধর্ম পালন কর), আমাতে মন ও বুদ্ধি অর্পণ করিলে তুমি নিশ্চিতই আমাকে প্রাপ্ত হইবে । ৭
হে পার্থ, চিত্তকে অন্য বিষয়ে যাইতে না দিয়া পুনঃ পুনঃ অভ্যাস দ্বারা উহাকে স্থির করিয়া সেই দিব্য পরমপুরুষের ধ্যান করিতে থাকিলে সাধক সেই পুরুষকেই প্রাপ্ত হন । ৮
সেই পরমপুরুষ, সর্বজ্ঞ, অনাদি, সর্বনিয়ন্তা, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম, সকলের বিধাতা, অচিন্ত্যস্বরূপ, আদিত্যবৎ স্বরূপ-প্রকাশক, প্রকৃতির অতীত; যিনি মৃত্যুকালে মনকে একাগ্র করিয়া ভক্তিযুক্ত হইয়া যোগবলের দ্বারা প্রাণকে ভ্রূযুগলের মধ্যে ধারণ করিয়া তাঁহাকে স্মরণ করেন, তিনি সেই দিব্য পরমপুরুষকে প্রাপ্ত হন । ৯,১০
বেদবিদ্গণ যাঁহাকে অক্ষর বলেন, অনাসক্ত যোগিগণ যাঁহাতে প্রবেশ করেন, যাঁহাকে পাইবার জন্য ব্রহ্মচারিগণ ব্রহ্মচর্য্য অনুষ্ঠান করেন, সেই পরম পদ প্রাপ্তির উপায় সংক্ষেপে তোমাকে বলিতেছি । ১১
সমস্ত ইন্দ্রিয়দ্বার সংযত করিয়া (ইন্দ্রিয়গণকে বিষয় হইতে প্রত্যাহৃত করিয়া), মনকে হৃদয়ে নিরুদ্ধ করিয়া, প্রাণকে ভ্রূযুগলের মধ্যে ধারণ করিয়া, আত্মসমাধিরূপ যোগে অবস্থিত হইয়া ॐ (ওঁ) এই ব্রহ্মাত্মক একাক্ষর উচ্চারণপূর্বক আমাকে স্মরণ করিতে করিতে যিনি দেহ ত্যাগ করিয়া প্রস্থান করেন তিনি পরম গতি প্রাপ্ত হন । ১২,১৩
যিনি অনন্যচিত্ত হইয়া চিরদিন নিরন্তর আমাকে স্মরণ করেন সেই নিত্যযুক্ত যোগীর পক্ষে আমি সুখলভ্য । ১৪
পূর্বোক্ত মদ্ভক্তগণ আমাকে পাইয়া আর দুঃখের আলয়স্বরূপ অনিত্য পুনর্জন্ম প্রাপ্ত হন না । যেহেতু তাঁহারা (মৎপ্রাপ্তিরূপ) পরমা সিদ্ধি লাভ করেন । ১৫
হে অর্জুন, ব্রহ্মলোক পর্যন্ত সমস্তলোক হইতেই লোক সকল ফিরিয়া পুনরায় জন্মগ্রহণ করে । কিন্তু হে কৌন্তেয়, আমাকে পাইলে আর পুনর্জন্ম হয় না । ১৬
মনুষ্যের গণনায় চতুর্যুগসহস্র পর্যন্ত যে একটা দিন এবং এরূপ চতুর্যুগসহস্র পর্য্যন্ত ব্রহ্মার যে একটা রাত্রি ইহা যাঁহারা জানেন তাঁহারাই প্রকৃত অহোরাত্রবেত্তা অর্থাৎ দিবারাত্রি প্রকৃত তত্ত্ব জানেন । ১৭
ব্রহ্মার দিবসের আগমে অব্যক্ত (প্রকৃতি) হইতে সকল ব্যক্ত পদার্থ উদ্ভূত হয় । আবার রাত্রি সমাগমে সেই অব্যক্ত কারণেই লয়প্রাপ্ত হয় । ১৮
হে পার্থ, এই সেই ভূতগণই পুনঃ পুনঃ জন্মগ্রহণ করিয়া ব্রহ্মার রাত্রি সমাগমে লয় প্রাপ্ত হয়, দিবা সমাগমে আবার অবশ ভাবে (অর্থাৎ স্ব স্ব কর্মের বশীভূত হইয়া) প্রাদুর্ভূত হয় । ১৯
কিন্তু সেই অব্যক্তেরও (প্রকৃতির) অতীত যে নিত্য অব্যক্ত পদার্থ আছেন, তিনি সকল ভূতের বিনাশ হইলেও বিনষ্ট হন না । ২০
যাহা অব্যক্ত অক্ষর নামে কথিত হয়, যাহাকে শ্রেষ্ঠ গতি বলে, যাহা পাইলে পুনরায় ফিরিতে হয় না, তাহাই আমার পরম স্থান বা স্বরূপ; (অর্থাৎ) আমিই পরম গতি, তদ্ভিন্ন জন্ম অতিক্রম করিবার উপায় নাই । ২১
হে পার্থ, সকল ভূতই যাঁহাতে অবস্থিতি করিতেছে, যাঁহাদ্বারা এই সমস্ত জগৎ ব্যাপ্ত হইয়া আছে, সেই পরম পুরুষকে একমাত্র অনন্য ভক্তিদ্বারাই লাভ করা যায়, আর কিছুতে নহে । ২২
হে ভরতর্ষভ যে কালে (মার্গে) গমন করিলে যোগিগণ পুনর্জন্ম প্রাপ্ত হন না এবং যে কালে গমন করিলে পুনর্জন্ম প্রাপ্ত হন তাহা বলিতেছি । ২৩
অগ্নির্জ্যোতি, দিন, শুক্ল পক্ষ, উত্তরায়ণ ছয়মাস - এই সময় (এই দেবতাগণের লক্ষিত পথে গমন করিয়া) ব্রহ্মোপাসকগণ ব্রহ্মকে প্রাপ্ত হন । ২৪
ধূম, রাত্রি, কৃষ্ণপক্ষ, দক্ষিণায়ন ছয় মাস এই সময়ে অর্থাৎ এই সকল দেবতাগণের লক্ষিত পথে গমন করিয়া কর্মী পুরুষ স্বর্গলোক প্রাপ্ত হইয়া তথায় কর্মফল ভোগ করতঃ পুনরায় সংসারে পুনরাবৃত্ত হন । ২৫
জগতের শুক্ল (প্রকাশময়) ও কৃষ্ণ (অন্ধকারময়) এই দুইটি পথ অনাদি বলিয়া প্রসিদ্ধ । একটি দ্বারা মোক্ষ লাভ হয়, অপরটি দ্বারা পুনর্জন্ম লাভ করিতে হয় । ২৬
হে অর্জুন, (মোক্ষ ও সংসার প্রাপক) এই মার্গদ্বয় অবগত হইয়া যোগী পুরুষ মোহগ্রস্ত হন না । (সংসার-প্রাপক কাম্য কর্মে লিপ্ত হন না, মোক্ষ-প্রাপক মার্গ অবলম্বন করেন); অতএব হে অর্জুন, তুমি সর্বদা যোগযুক্ত হও (ঈশ্বরে চিত্ত সমাহিত কর) । ২৭
বেদাভ্যাসে, যজ্ঞে, তপস্যায় এবং দানাদিতে যে সকল পুণ্যফল নির্দিষ্ট আছে, এই তত্ত্ব জানিয়া যোগীপুরুষ সে সকল অতিক্রম করেন এবং উৎকৃষ্ট আদ্যস্থান (মোক্ষ) প্রাপ্ত হন । ২৮
হে পুরুষোত্তম, সেই ব্রহ্ম কি ? অধ্যাত্ম কি ? কর্ম কি ? অধিভূত কাহাকে বলে আর অধিদৈবই বা কাহাকে বলে ? অধিযজ্ঞ কি ? এ দেহে তিনি কি প্রকারে চিন্তনীয় ? হে মধুসূদন, অন্তকালে সংযতচিত্ত ব্যক্তিগণ কিরূপে তোমাকে জানিতে পারেন ? ১,২
শ্রীভগবান্ কহিলেন -
পরম অক্ষর যে বস্তু তাহাই ব্রহ্ম; স্বভাবই অধ্যাত্ম বলিয়া উক্ত হয় । তার ভূতগণের উৎপত্তিকারক যে দ্রব্যত্যাগ-রূপ যজ্ঞ (অথবা মতান্তরে সৃষ্টি ব্যাপার) তাহাই কর্মশব্দ বাচ্য । ৩
হে নরশ্রেষ্ঠ ! বিনাশশীল দেহাদি বস্তুই অধিভূত; পুরুষই অধিদৈবত । এই দেহে আমিই অধিযজ্ঞ । ৪
যিনি অন্তকালেও আমাকে স্মরণ করিতে করিতে দেহ ত্যাগ করিয়া প্রস্থান করেন, তিনি আমারই ভাব প্রাপ্ত হন, ইহাতে সংশয় নাই । ৫
যিনি যে ভাব স্মরণ করিতে করিতে অন্তকালে দেহত্যাগ করেন, হে কৌন্তেয়, তিনি সর্বদা সেই ভাবে তন্ময়চিত্ত থাকায় সেই ভাবই প্রাপ্ত হন । ৬
অতএব সর্বদা আমাকে স্মরণ কর এবং যুদ্ধ কর (স্বধর্ম পালন কর), আমাতে মন ও বুদ্ধি অর্পণ করিলে তুমি নিশ্চিতই আমাকে প্রাপ্ত হইবে । ৭
হে পার্থ, চিত্তকে অন্য বিষয়ে যাইতে না দিয়া পুনঃ পুনঃ অভ্যাস দ্বারা উহাকে স্থির করিয়া সেই দিব্য পরমপুরুষের ধ্যান করিতে থাকিলে সাধক সেই পুরুষকেই প্রাপ্ত হন । ৮
সেই পরমপুরুষ, সর্বজ্ঞ, অনাদি, সর্বনিয়ন্তা, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম, সকলের বিধাতা, অচিন্ত্যস্বরূপ, আদিত্যবৎ স্বরূপ-প্রকাশক, প্রকৃতির অতীত; যিনি মৃত্যুকালে মনকে একাগ্র করিয়া ভক্তিযুক্ত হইয়া যোগবলের দ্বারা প্রাণকে ভ্রূযুগলের মধ্যে ধারণ করিয়া তাঁহাকে স্মরণ করেন, তিনি সেই দিব্য পরমপুরুষকে প্রাপ্ত হন । ৯,১০
বেদবিদ্গণ যাঁহাকে অক্ষর বলেন, অনাসক্ত যোগিগণ যাঁহাতে প্রবেশ করেন, যাঁহাকে পাইবার জন্য ব্রহ্মচারিগণ ব্রহ্মচর্য্য অনুষ্ঠান করেন, সেই পরম পদ প্রাপ্তির উপায় সংক্ষেপে তোমাকে বলিতেছি । ১১
সমস্ত ইন্দ্রিয়দ্বার সংযত করিয়া (ইন্দ্রিয়গণকে বিষয় হইতে প্রত্যাহৃত করিয়া), মনকে হৃদয়ে নিরুদ্ধ করিয়া, প্রাণকে ভ্রূযুগলের মধ্যে ধারণ করিয়া, আত্মসমাধিরূপ যোগে অবস্থিত হইয়া ॐ (ওঁ) এই ব্রহ্মাত্মক একাক্ষর উচ্চারণপূর্বক আমাকে স্মরণ করিতে করিতে যিনি দেহ ত্যাগ করিয়া প্রস্থান করেন তিনি পরম গতি প্রাপ্ত হন । ১২,১৩
যিনি অনন্যচিত্ত হইয়া চিরদিন নিরন্তর আমাকে স্মরণ করেন সেই নিত্যযুক্ত যোগীর পক্ষে আমি সুখলভ্য । ১৪
পূর্বোক্ত মদ্ভক্তগণ আমাকে পাইয়া আর দুঃখের আলয়স্বরূপ অনিত্য পুনর্জন্ম প্রাপ্ত হন না । যেহেতু তাঁহারা (মৎপ্রাপ্তিরূপ) পরমা সিদ্ধি লাভ করেন । ১৫
হে অর্জুন, ব্রহ্মলোক পর্যন্ত সমস্তলোক হইতেই লোক সকল ফিরিয়া পুনরায় জন্মগ্রহণ করে । কিন্তু হে কৌন্তেয়, আমাকে পাইলে আর পুনর্জন্ম হয় না । ১৬
মনুষ্যের গণনায় চতুর্যুগসহস্র পর্যন্ত যে একটা দিন এবং এরূপ চতুর্যুগসহস্র পর্য্যন্ত ব্রহ্মার যে একটা রাত্রি ইহা যাঁহারা জানেন তাঁহারাই প্রকৃত অহোরাত্রবেত্তা অর্থাৎ দিবারাত্রি প্রকৃত তত্ত্ব জানেন । ১৭
ব্রহ্মার দিবসের আগমে অব্যক্ত (প্রকৃতি) হইতে সকল ব্যক্ত পদার্থ উদ্ভূত হয় । আবার রাত্রি সমাগমে সেই অব্যক্ত কারণেই লয়প্রাপ্ত হয় । ১৮
হে পার্থ, এই সেই ভূতগণই পুনঃ পুনঃ জন্মগ্রহণ করিয়া ব্রহ্মার রাত্রি সমাগমে লয় প্রাপ্ত হয়, দিবা সমাগমে আবার অবশ ভাবে (অর্থাৎ স্ব স্ব কর্মের বশীভূত হইয়া) প্রাদুর্ভূত হয় । ১৯
কিন্তু সেই অব্যক্তেরও (প্রকৃতির) অতীত যে নিত্য অব্যক্ত পদার্থ আছেন, তিনি সকল ভূতের বিনাশ হইলেও বিনষ্ট হন না । ২০
যাহা অব্যক্ত অক্ষর নামে কথিত হয়, যাহাকে শ্রেষ্ঠ গতি বলে, যাহা পাইলে পুনরায় ফিরিতে হয় না, তাহাই আমার পরম স্থান বা স্বরূপ; (অর্থাৎ) আমিই পরম গতি, তদ্ভিন্ন জন্ম অতিক্রম করিবার উপায় নাই । ২১
হে পার্থ, সকল ভূতই যাঁহাতে অবস্থিতি করিতেছে, যাঁহাদ্বারা এই সমস্ত জগৎ ব্যাপ্ত হইয়া আছে, সেই পরম পুরুষকে একমাত্র অনন্য ভক্তিদ্বারাই লাভ করা যায়, আর কিছুতে নহে । ২২
হে ভরতর্ষভ যে কালে (মার্গে) গমন করিলে যোগিগণ পুনর্জন্ম প্রাপ্ত হন না এবং যে কালে গমন করিলে পুনর্জন্ম প্রাপ্ত হন তাহা বলিতেছি । ২৩
অগ্নির্জ্যোতি, দিন, শুক্ল পক্ষ, উত্তরায়ণ ছয়মাস - এই সময় (এই দেবতাগণের লক্ষিত পথে গমন করিয়া) ব্রহ্মোপাসকগণ ব্রহ্মকে প্রাপ্ত হন । ২৪
ধূম, রাত্রি, কৃষ্ণপক্ষ, দক্ষিণায়ন ছয় মাস এই সময়ে অর্থাৎ এই সকল দেবতাগণের লক্ষিত পথে গমন করিয়া কর্মী পুরুষ স্বর্গলোক প্রাপ্ত হইয়া তথায় কর্মফল ভোগ করতঃ পুনরায় সংসারে পুনরাবৃত্ত হন । ২৫
জগতের শুক্ল (প্রকাশময়) ও কৃষ্ণ (অন্ধকারময়) এই দুইটি পথ অনাদি বলিয়া প্রসিদ্ধ । একটি দ্বারা মোক্ষ লাভ হয়, অপরটি দ্বারা পুনর্জন্ম লাভ করিতে হয় । ২৬
হে অর্জুন, (মোক্ষ ও সংসার প্রাপক) এই মার্গদ্বয় অবগত হইয়া যোগী পুরুষ মোহগ্রস্ত হন না । (সংসার-প্রাপক কাম্য কর্মে লিপ্ত হন না, মোক্ষ-প্রাপক মার্গ অবলম্বন করেন); অতএব হে অর্জুন, তুমি সর্বদা যোগযুক্ত হও (ঈশ্বরে চিত্ত সমাহিত কর) । ২৭
বেদাভ্যাসে, যজ্ঞে, তপস্যায় এবং দানাদিতে যে সকল পুণ্যফল নির্দিষ্ট আছে, এই তত্ত্ব জানিয়া যোগীপুরুষ সে সকল অতিক্রম করেন এবং উৎকৃষ্ট আদ্যস্থান (মোক্ষ) প্রাপ্ত হন । ২৮
___________________________
Online Source:
http://geetabangla.blogspot.com/2013/06/blog-post_5768.html
http://geetabangla.blogspot.com/2013/06/blog-post_7151.html
১,২) পূর্বাধ্যায়ের শেষে ব্রহ্ম, অধ্যাত্ম প্রভৃতি যে সকল তত্ত্ব উল্লেখ করা হইয়াছে, সেই সকলের প্রকৃত মর্ম কি তাহা এই দুইটি শ্লোকে অর্জুন জিজ্ঞাসা করিলেন । ভগবান্ পরবর্তী কয়েকটি শ্লোকে সংক্ষেপে উহার উত্তর দিয়াছেন এবং পরে অক্ষর ব্রহ্মস্বরূপের বিস্তারিত বর্ণনা করিয়াছেন ।
৩,৪) ব্রহ্ম = পরমাত্মা; যাঁহার ক্ষয় নাই, বিকার নাই, অব্যক্ত অক্ষর বস্তুতত্ত্ব ।
স্ব-ভাব ও অধ্যাত্ম = জীবাত্মা; পরব্রহ্মের প্রত্যগাত্মভাবে প্রতি-দেহে অবস্থিতি; দেহ অধিকৃত করিয়া থাকেন; স্ব-ভাব = ব্রহ্মের সগুণ বিভাব ।
কর্মতত্ত্ব - স্বভাব হইতেই বিসর্গ অর্থাৎ বিশ্বশক্তির সমস্ত কর্মের উৎপত্তি ।
অধিভূত/ক্ষরভাব - কর্মের যে ফল, অর্থাৎ নশ্বর জগৎ-প্রপঞ্চ; ক্ষর স্বভাব দেহাদি যাহা-কিছু প্রাণিমাত্রকেই অধিকার করিয়া উৎপন্ন হয় ।
অধিদৈবত - ভূতসমূহে অধিষ্ঠান-চৈতন্যরূপে যাহা অবস্থিত; সমস্ত দেবতা যাঁহার অঙ্গীভূত, যিনি সমস্ত প্রাণী ও ইন্দ্রিয়াদির নিয়ন্তা, সেই আদি পুরুষ ।
যজ্ঞ - সৃষ্টি রক্ষার্থ জীবের নিষ্কাম কর্ম ।
অধিযজ্ঞ - সকল কর্মের নিয়ন্তা, সর্বযজ্ঞের ভোক্তা, অন্তর্যামি, বিষ্ণু । - [শ্রীঅরবিন্দ]
স্ব-ভাব ও অধ্যাত্ম = জীবাত্মা; পরব্রহ্মের প্রত্যগাত্মভাবে প্রতি-দেহে অবস্থিতি; দেহ অধিকৃত করিয়া থাকেন; স্ব-ভাব = ব্রহ্মের সগুণ বিভাব ।
কর্মতত্ত্ব - স্বভাব হইতেই বিসর্গ অর্থাৎ বিশ্বশক্তির সমস্ত কর্মের উৎপত্তি ।
অধিভূত/ক্ষরভাব - কর্মের যে ফল, অর্থাৎ নশ্বর জগৎ-প্রপঞ্চ; ক্ষর স্বভাব দেহাদি যাহা-কিছু প্রাণিমাত্রকেই অধিকার করিয়া উৎপন্ন হয় ।
অধিদৈবত - ভূতসমূহে অধিষ্ঠান-চৈতন্যরূপে যাহা অবস্থিত; সমস্ত দেবতা যাঁহার অঙ্গীভূত, যিনি সমস্ত প্রাণী ও ইন্দ্রিয়াদির নিয়ন্তা, সেই আদি পুরুষ ।
যজ্ঞ - সৃষ্টি রক্ষার্থ জীবের নিষ্কাম কর্ম ।
অধিযজ্ঞ - সকল কর্মের নিয়ন্তা, সর্বযজ্ঞের ভোক্তা, অন্তর্যামি, বিষ্ণু । - [শ্রীঅরবিন্দ]
মূল কথা, সকলই আমি, সকলই আমার বিভাব । সৃষ্টি-রক্ষার্থ বা লোকসংগ্রহার্থ জীবের যে কর্ম, উহাও আমারই কর্ম । সুতরাং জীব আমাকে জানিলেই ব্রহ্মতত্ত্ব, অধ্যাত্মতত্ত্ব, কর্মতত্ত্ব সবই বুঝিতে পারে, এবং অধিভূত, অধিদৈবতাদি আমার বিভিন্ন বিভাব-সহ সমগ্র আমাকে জানিয়া মুক্তিলাভ করিতে পারে ।
১৭,১৮) অব্যক্ত : সাংখ্যমতে মূল প্রকৃতিই অব্যক্ত । ভিন্ন মতে আদি পুরুষ হিরণ্যগর্ভ বা ব্রহ্মার নিদ্রাবস্থা ।
সৃষ্টি ও প্রলয়তত্ত্বে কাল-গণনা : ব্রহ্মার একদিনে এক কল্প । এই কল্পারম্ভেই সৃষ্টি এবং এই কল্পক্ষয়ে প্রলয় । এইরূপ পুনঃ পুনঃ হইতেছে । সুতরাং মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত জীবগণকে কল্পে কল্পেই জন্ম মরণ দুঃখ ভোগ করিতে হয় । [ব্রহ্মাণ্ডের সময়]
সৃষ্টি ও প্রলয়তত্ত্বে কাল-গণনা : ব্রহ্মার একদিনে এক কল্প । এই কল্পারম্ভেই সৃষ্টি এবং এই কল্পক্ষয়ে প্রলয় । এইরূপ পুনঃ পুনঃ হইতেছে । সুতরাং মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত জীবগণকে কল্পে কল্পেই জন্ম মরণ দুঃখ ভোগ করিতে হয় । [ব্রহ্মাণ্ডের সময়]
২০) পূর্বের প্রকৃতি বা হিরণ্যগর্ভকেই অব্যক্ত শব্দে লক্ষ্য করা হইয়াছে (১৮শ শ্লোক) । কিন্তু সেই অব্যক্ত হইতেও শ্রেষ্ঠ যে অব্যক্ত বস্তুতত্ত্ব, পরমাত্মা বা পরমেশ্বর, তাঁহার কিছুতেই বিনাশ নাই ।
২৩) এস্থলে ‘কাল’ শব্দে দিবারাত্রি ইত্যাদি কালের অভিমানিনী দেবতা বা তাহাদিগের প্রদর্শিত মার্গ এইরূপ বুঝিতে হইবে । বস্তুতঃ কোন্ কালে মৃত্যু হইলে মোক্ষ লাভ হয় বা হয় না, তাহা এই স্থলে বলা উদ্দেশ্য নয় । কোন্ কর্ম-ফলে কোন্ পথে গমন করিলে মোক্ষ বা পরমপদ প্রাপ্তি হয় এবং কোন্ পথে গমন করিলে উহা হয় না, তাহাই পরবর্তী তিন শ্লোকে বলা হইয়াছে । এস্থলে যোগী শব্দ সাধারণভাবে ‘সাধক’ এই অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে । উহাতে ব্রহ্মোপাসক ও কর্মকাণ্ডী সাধক উভয়ই বুঝিতে হইবে ।
২২) ব্রহ্মভক্ত : আধুনিক ব্রাহ্মগণ ব্রহ্মভক্ত, তাঁহারা ব্রহ্মকেই দয়াময়, প্রেমময় ভগবান বলিয়া জানেন, কিন্তু সাকার-বিগ্রহাদির প্রয়োজন বোধ করেন না, মানেনও না । মায়াবাদী ব্রহ্মচিন্তকের নিরাকার নির্গুণ ব্রহ্ম, ব্রাহ্ম-ভক্তের নিরাকার সগুণ ব্রহ্ম, বৈষ্ণব-ভক্তের সাকার সগুণ ব্রহ্ম, এ -সকলই এক । 'আমি নির্গুণ হইয়াও সগুণ' [১৩|১৪-১৫], 'নিরাকার হইয়াও সাকার' [৪|৬], 'আমাকে ভক্তি করিলেই ব্রহ্মজ্ঞান হয়' [৮|২২], 'আবার ব্রহ্মজ্ঞান হইলেই আমাতে ভক্তি হয়' [১৮|৫৪], 'জ্ঞানীই আমার শ্রেষ্ঠ ভক্ত' [৭|১৭], 'আমাতে অব্যভিচারিণী ভক্তিই জ্ঞান' [১৩|১০] । সুতরাং গীতামতে ব্রহ্মজ্ঞানে ও ভগবদ্ভক্তিতে কোনো বিরোধ নাই ।
২২) ব্রহ্মভক্ত : আধুনিক ব্রাহ্মগণ ব্রহ্মভক্ত, তাঁহারা ব্রহ্মকেই দয়াময়, প্রেমময় ভগবান বলিয়া জানেন, কিন্তু সাকার-বিগ্রহাদির প্রয়োজন বোধ করেন না, মানেনও না । মায়াবাদী ব্রহ্মচিন্তকের নিরাকার নির্গুণ ব্রহ্ম, ব্রাহ্ম-ভক্তের নিরাকার সগুণ ব্রহ্ম, বৈষ্ণব-ভক্তের সাকার সগুণ ব্রহ্ম, এ -সকলই এক । 'আমি নির্গুণ হইয়াও সগুণ' [১৩|১৪-১৫], 'নিরাকার হইয়াও সাকার' [৪|৬], 'আমাকে ভক্তি করিলেই ব্রহ্মজ্ঞান হয়' [৮|২২], 'আবার ব্রহ্মজ্ঞান হইলেই আমাতে ভক্তি হয়' [১৮|৫৪], 'জ্ঞানীই আমার শ্রেষ্ঠ ভক্ত' [৭|১৭], 'আমাতে অব্যভিচারিণী ভক্তিই জ্ঞান' [১৩|১০] । সুতরাং গীতামতে ব্রহ্মজ্ঞানে ও ভগবদ্ভক্তিতে কোনো বিরোধ নাই ।
২৬) দেবযান, পিতৃযান ও তৃতীয় মার্গ :
দেবযান / অর্চিরাদি / শুক্ল / উত্তরায়ণ মার্গ : যাঁহারা অরণ্যে শ্রদ্ধা ও তপস্যাদির উপাসনা করেন, তাঁহারা অর্চিঃ অর্থাৎ জ্যোতিঃকে প্রাপ্ত হন, অর্চিঃ হইতে দিবা, দিবা হইতে শুক্লপক্ষ, শুক্লপক্ষ হইতে উত্তরায়ণ ছয়মাস, মাস হইতে সংবৎসর, বৎসর হইতে আদিত্য, আদিত্য হইতে চন্দ্রমা, চন্দ্রমা হইতে বিদ্যুৎ প্রাপ্ত হন, পরে এক অমানব পুরুষ ইহাদিগকে ব্রহ্মলোক প্রাপ্ত করান, ইহাই দেবযান পন্থা । যাঁহারা ব্রহ্মোপাসনা করেন, যাঁহারা নিবৃত্তি-মার্গাবলম্বী তাঁহারা এই মার্গে ব্রহ্মলোকে গমন করেন ।
পিতৃযান / ধূম্রাদি / কৃষ্ণ / দক্ষিণ মার্গ : যাঁহারা গ্রামে গৃহস্থাশ্রমে থাকিয়া ইষ্টাপূর্ত (যাগাদি ও জলাশয় খননাদি-পুণ্যকর্ম) এবং দানাদি কর্ম করেন, তাঁহারা ধূমকে প্রাপ্ত হন; ধূম হইতে রাত্রি, রাত্রি হইতে কৃষ্ণপক্ষ, কৃষ্ণপক্ষ হইতে ছয়মাস দক্ষিণায়ন; ইহারা বৎসরকে প্রাপ্ত হন না, মাস হইতে পিতৃলোক, তথা হইতে আকাশ ও আকাশ হইতে চন্দ্রলোক প্রাপ্ত হন । যাগযজ্ঞাদি-পুণ্যফলে এই পথে যাঁহারা চন্দ্রলোকাদিতে গমন করেন, তাঁহাদিগকে পুণ্যক্ষয়ে আবার সংসারে প্রত্যাবর্তন করিতে হয় ।
ক্রমমুক্তি / বিদেহমুক্তি : ব্রহ্মলোক-প্রাপ্ত সগুণ ব্রহ্মোপাসকগণ ব্রহ্মার আয়ুষ্কাল পর্যন্ত সেখানে বাস করেন । ব্রহ্মলোক যখন বিনষ্ট হয় তখন তাঁহাদের পুনর্জন্ম অবশ্যম্ভাবী; কিন্তু ব্রহ্মলোকে অবস্থানকালে যদি তাঁহাদের সম্যক জ্ঞান উৎপন্ন হয়, তবে তাঁহারা পরব্রহ্মেই লীন হন অর্থাৎ মোক্ষ লাভ করেন । দেহত্যাগের পর ব্রহ্মলোকে গিয়া মুক্তি হয় বলিয়া ইহাকে বিদেহমুক্তিও বলে ।
জীবন্মুক্তি / সদ্যোমুক্তি : শুদ্ধ অদ্বৈতবাদিগণ বলেন, যাঁহারা নির্গুণ ব্রহ্মোপাসক এবং যাঁহাদের আত্মজ্ঞান লাভ হইয়াছে, তাঁহাদিগের আর উৎক্রান্তি হয় না, তাঁহাদের ব্রহ্মলোকে যাইতে হয় না, তাঁহারা ব্রহ্মই হন । গীতার মতে এই অবস্থায়ই ভগবানে পরাভক্তি জন্মে এবং নিষ্কাম কর্মও থাকিতে পারে ।
তৃতীয় (আসুরী) মার্গ : যাহারা জ্ঞানালোচনা বা পুণ্যকর্ম কিছুই করে না, কেবল যাবজ্জীবন পাপাচরণ করে, তাহারা পশু-পক্ষী, কীট-পতঙ্গাদি তির্যক-যোনিতে পুনঃপুনঃ জন্মগ্রহণ করে [ছান্দোগ্যোপনিষৎ|৫|১০|৮; কঠোপনিষৎ|২|৩|৪; গীতাতেও আসুরী পুরুষদিগের নিরয়গতি হয়, এইরূপ উল্লেখ আছে [গী|১৬|১৯-২১] ।
ভীষ্মদেব শরশয্যায় উত্তরায়ণের প্রতীক্ষা করিতেছিলেন [মভা|ভীষ্ম|১২০|অনু|১৬৭] । ইহাতে বোধ হয়, দিন, শুক্লপক্ষ, উত্তরায়ণকাল কোনো-সময় মরণের প্রশস্ত কাল বলিয়া গণ্য হইত । লোকমান্য তিলক বলেন - 'আমি স্থির করিয়াছি, উত্তর গোলার্ধের যে স্থানে সূর্য ক্ষিতিজের উপর বরাবর ছয় মাস দৃশ্য হইয়া থাকে, সেই স্থানে অর্থাৎ ধ্রুবের নিকট অথবা মেরুস্থানে বৈদিক ঋষিগণের যখন বসতি ছিল, তখন হইতেই ছয় মাস উত্তরায়ণের প্রকাশ-কালকেই মৃত্যুর প্রশস্ত কাল বলিয়া মানিবার প্রথা প্রচলিত হইয়া থাকিবে ।'
২৮) ‘এই তত্ত্ব জানিয়া’ অর্থাৎ কাম্যকর্মাদি দ্বারা স্বর্গলাভ হইলেও পুনরায় সংসার প্রাপ্তি অনিবার্য্য, ইহা জানিয়া স্বর্গাদি ফল ভোগ তুচ্ছ করিয়া থকেন এবং যোগযুক্ত হইয়া সেই পরম পুরুষকে প্রাপ্ত হন ।
___________________________Online Source:
http://geetabangla.blogspot.com/2013/06/blog-post_5768.html
http://geetabangla.blogspot.com/2013/06/blog-post_7151.html
*Hard Copy Source:
Disclaimer: This site is not officially related to Presidency Library, Kolkata. This is a personal, non-commercial, research-oriented effort of a novice religious wanderer.
এটি আধ্যাত্মিক পথের এক অর্বাচীন পথিকের ব্যক্তিগত, অবাণিজ্যিক, গবেষণা-ধর্মী প্রয়াস মাত্র ।
No comments:
Post a Comment