ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়
ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন -
হে সঞ্জয়, পুণ্যক্ষেত্র কুরুক্ষেত্রে আমার পুত্রগণ এবং পাণ্ডুপুত্রগণ যুদ্ধার্থে সমবেত হইয়া কি করিলেন ? ১
সঞ্জয় কহিলেন -
সঞ্জয় কহিলেন -
তৎকালে রাজা দুর্যোধন পাণ্ডব-সৈন্যদিগকে ব্যুহাকারে সজ্জিত দেখিয়া দ্রোণাচার্য সমীপে যাইয়া এই কথা বলিলেন । ২
গুরুদেব, আপনার ধীমান্ শিষ্য দ্রুপদপুত্র কর্তৃক ব্যুহবদ্ধ পাণ্ডবদিগের এই বিশাল সৈন্যদল দেখুন । ৩
এই সেনার মধ্যে ভীমার্জুনের সমকক্ষ, মহাধনুর্ধারী বহু বীর পুরুষ রহিয়াছেন । সাত্যকি, বিরাট, মহারথ দ্রুপদ, ধৃষ্টকেতু, চেকিতান, বীর্যবান্ কাশীরাজ, কুন্তীভোজ পুরুজিৎ, নরশ্রেষ্ঠ শৈব্য, বিক্রমশালী যুধামন্যু, বীর্যবান্ উত্তমৌজা, সুভদ্রা-পুত্র (অভিমন্যু), দ্রৌপদীর পুত্রগণ (প্রতিবিন্ধ্যাদি) ইহারা সকলেই মহারথী । ৪-৬
দে দ্বিজশ্রেষ্ঠ ! আমার সৈন্যমধ্যেও যে সকল প্রধান সেনানায়ক আছেন তাহাদিগকে অবগত হউন । আপনার সম্যক্ অবগতির জন্য তাহাদিগের নাম বলিতেছি । ৭
আপনি, ভীষ্ম, কর্ণ, যুদ্ধজয়ী কৃপ, অশ্বত্থামা, বিকর্ণ, সোমদত্তপুত্র এবং জয়দ্রথঃ । ৮
আমার জন্য জীবন ত্যাগে প্রস্তুত আরও অনেক নানাশস্ত্রধারী বীরপুরুষ আছেন । তাঁহার সকলেই যুদ্ধ বিশারদ । ৯
ভীষ্মকর্তৃক সম্যক্ রক্ষিত আমাদের সেনা অপরিমিত । আর ভীমকর্তৃক রক্ষিত পাণ্ডবদের সেনা পরিমিত (অপেক্ষাকৃত অল্প) । ১০
আপনারা সকলেই স্ব স্ব বিভাগানুসারে সমস্ত বূহ্যদ্বারে অবস্থিত থাকিয়া ভীষ্মকেই সকল দিক্ হইতে রক্ষা করিতে থাকুন । ১১
তখন প্রতাপশালী কুরুবৃদ্ধ পিতামহ তাঁহার (দুর্যোধনের) আনন্দ জন্মাইয়া উচ্চ সিংহনাদ করিয়া শঙ্খধ্বনি করিলেন । ১২
তখন শঙ্খ, ভেরী, পণব, আনক, গোমুখ প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র সহসা বাদিত হইলে সেই শব্দ তুমুল হইয়া উঠিল । ১৩
অনন্তর শ্বেতাশ্বযুক্ত মহারথে স্থিত শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুন দিব্য শঙ্খধ্বনি করিলেন । ১৪
শ্রীকৃষ্ণ পাঞ্চজন্য নামে শঙ্খ, অর্জুন দেবদত্ত নামক শঙ্খ এবং ভীম পৌণ্ড্র নামক মহাশঙ্খ বাজাইলেন । কুন্তীপুত্র রাজা যুধিষ্ঠির অনন্তবিজয় নামক শঙ্খ, নকুল সুঘোষ নামক শঙ্খ এবং সহদেব মণিপুস্পক নামক শঙ্খ বাজাইলেন । ১৫,১৬
হে রাজন্, মহাধনুর্ধর কাশীরাজ, মহারথ শিখণ্ডী, ধৃষ্টদ্যুম্ন, বিরাট রাজা, অজেয় সাত্যকি, দ্রুপদ, দ্রৌপদীর পুত্রগণ, মহাবাহু সুভদ্রা-পুত্র - ইহারা সকলেই পৃথক্ পৃথক্ শঙ্খ বাজাইলেন । ১৭,১৮
সেই তুমুল শব্দ আকাশ ও পৃথিবীতে প্রতিধ্বনিত হইয়া ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণ ও তৎপক্ষীয়গণের হৃদয় বিদীর্ণ করিল । ১৯
হে রাজন্, অনন্তর ধৃতরাষ্ট্রপক্ষীয়দিগকে যুদ্ধোদ্যোগে অবস্থিত দেখিয়া শস্ত্রনিক্ষেপে প্রবৃত্ত কপিধ্বজ অর্জুন ধনু উত্তোলন করিয়া শ্রীকৃষ্ণকে এই কথা বলিলেন । ২০
অর্জুন বলিলেন -
গুরুদেব, আপনার ধীমান্ শিষ্য দ্রুপদপুত্র কর্তৃক ব্যুহবদ্ধ পাণ্ডবদিগের এই বিশাল সৈন্যদল দেখুন । ৩
এই সেনার মধ্যে ভীমার্জুনের সমকক্ষ, মহাধনুর্ধারী বহু বীর পুরুষ রহিয়াছেন । সাত্যকি, বিরাট, মহারথ দ্রুপদ, ধৃষ্টকেতু, চেকিতান, বীর্যবান্ কাশীরাজ, কুন্তীভোজ পুরুজিৎ, নরশ্রেষ্ঠ শৈব্য, বিক্রমশালী যুধামন্যু, বীর্যবান্ উত্তমৌজা, সুভদ্রা-পুত্র (অভিমন্যু), দ্রৌপদীর পুত্রগণ (প্রতিবিন্ধ্যাদি) ইহারা সকলেই মহারথী । ৪-৬
দে দ্বিজশ্রেষ্ঠ ! আমার সৈন্যমধ্যেও যে সকল প্রধান সেনানায়ক আছেন তাহাদিগকে অবগত হউন । আপনার সম্যক্ অবগতির জন্য তাহাদিগের নাম বলিতেছি । ৭
আপনি, ভীষ্ম, কর্ণ, যুদ্ধজয়ী কৃপ, অশ্বত্থামা, বিকর্ণ, সোমদত্তপুত্র এবং জয়দ্রথঃ । ৮
আমার জন্য জীবন ত্যাগে প্রস্তুত আরও অনেক নানাশস্ত্রধারী বীরপুরুষ আছেন । তাঁহার সকলেই যুদ্ধ বিশারদ । ৯
ভীষ্মকর্তৃক সম্যক্ রক্ষিত আমাদের সেনা অপরিমিত । আর ভীমকর্তৃক রক্ষিত পাণ্ডবদের সেনা পরিমিত (অপেক্ষাকৃত অল্প) । ১০
আপনারা সকলেই স্ব স্ব বিভাগানুসারে সমস্ত বূহ্যদ্বারে অবস্থিত থাকিয়া ভীষ্মকেই সকল দিক্ হইতে রক্ষা করিতে থাকুন । ১১
তখন প্রতাপশালী কুরুবৃদ্ধ পিতামহ তাঁহার (দুর্যোধনের) আনন্দ জন্মাইয়া উচ্চ সিংহনাদ করিয়া শঙ্খধ্বনি করিলেন । ১২
তখন শঙ্খ, ভেরী, পণব, আনক, গোমুখ প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র সহসা বাদিত হইলে সেই শব্দ তুমুল হইয়া উঠিল । ১৩
অনন্তর শ্বেতাশ্বযুক্ত মহারথে স্থিত শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুন দিব্য শঙ্খধ্বনি করিলেন । ১৪
শ্রীকৃষ্ণ পাঞ্চজন্য নামে শঙ্খ, অর্জুন দেবদত্ত নামক শঙ্খ এবং ভীম পৌণ্ড্র নামক মহাশঙ্খ বাজাইলেন । কুন্তীপুত্র রাজা যুধিষ্ঠির অনন্তবিজয় নামক শঙ্খ, নকুল সুঘোষ নামক শঙ্খ এবং সহদেব মণিপুস্পক নামক শঙ্খ বাজাইলেন । ১৫,১৬
হে রাজন্, মহাধনুর্ধর কাশীরাজ, মহারথ শিখণ্ডী, ধৃষ্টদ্যুম্ন, বিরাট রাজা, অজেয় সাত্যকি, দ্রুপদ, দ্রৌপদীর পুত্রগণ, মহাবাহু সুভদ্রা-পুত্র - ইহারা সকলেই পৃথক্ পৃথক্ শঙ্খ বাজাইলেন । ১৭,১৮
সেই তুমুল শব্দ আকাশ ও পৃথিবীতে প্রতিধ্বনিত হইয়া ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণ ও তৎপক্ষীয়গণের হৃদয় বিদীর্ণ করিল । ১৯
হে রাজন্, অনন্তর ধৃতরাষ্ট্রপক্ষীয়দিগকে যুদ্ধোদ্যোগে অবস্থিত দেখিয়া শস্ত্রনিক্ষেপে প্রবৃত্ত কপিধ্বজ অর্জুন ধনু উত্তোলন করিয়া শ্রীকৃষ্ণকে এই কথা বলিলেন । ২০
অর্জুন বলিলেন -
হে অচ্যুত, যুদ্ধকামনায় অবস্থিত ইহাদিগকে যাবৎ আমি দর্শন করি, তাবৎ (তুমি) উভয় সেনার মধ্যে আমার রথ স্থাপন কর; এই যুদ্ধব্যাপারে কাহাদিগের সহিত আমার যুদ্ধ করিতে হইবে তাহা আমি দেখি; দুর্বুদ্ধি দুর্যোধনের হিতকামনায় যাহারা এখানে উপস্থিত হইয়াছেন, সেই সকল যুদ্ধার্থিগণকে আমি দেখি । ২১, ২২, ২৩
সঞ্জয় কহিলেন -
সঞ্জয় কহিলেন -
হে ভারত ! অর্জুন কর্তৃক এইরূপ অভিহিত হইয়া শ্রীকৃষ্ণ উভয় সেনার মধ্যে ভীষ্ম দ্রোণ এবং সমস্ত রাজগণের সম্মুখে উৎকৃষ্ট রথ স্থাপন করিয়া কহিলেন -
শ্রীকৃষ্ণ কহিলেন -
"হে অর্জুন, সমবেত কুরুগণকে দেখ ।'' ২৪,২৫
তখন অর্জুন উভয় সেনার মধ্যেই অবস্থিত পিতৃব্যগণ, পিতামহগণ, আচার্য্যগণ, মাতুলগণ, ভ্রাতৃগণ, পুত্রগণ, পৌত্রগণ, মিত্রগণ, শ্বশুরগণ ও সুহৃদ্গণকে দেখিলেন । ২৬
সেই কুন্তীপুত্র অর্জুন বন্ধুবান্ধবদিগকে যুদ্ধার্থে অবস্থিত দেখিয়া নিতান্ত করুণার্দ্র হইয়া বিষাদপূর্বক এই কথা কহিলেন । ২৭
অর্জুন কহিলেন -
শ্রীকৃষ্ণ কহিলেন -
"হে অর্জুন, সমবেত কুরুগণকে দেখ ।'' ২৪,২৫
তখন অর্জুন উভয় সেনার মধ্যেই অবস্থিত পিতৃব্যগণ, পিতামহগণ, আচার্য্যগণ, মাতুলগণ, ভ্রাতৃগণ, পুত্রগণ, পৌত্রগণ, মিত্রগণ, শ্বশুরগণ ও সুহৃদ্গণকে দেখিলেন । ২৬
সেই কুন্তীপুত্র অর্জুন বন্ধুবান্ধবদিগকে যুদ্ধার্থে অবস্থিত দেখিয়া নিতান্ত করুণার্দ্র হইয়া বিষাদপূর্বক এই কথা কহিলেন । ২৭
অর্জুন কহিলেন -
হে কৃষ্ণ, যুদ্ধেচ্ছু এই সকল স্বজনদিগকে সম্মুখে অবস্থিত দেখিয়া আমার শরীর অবসন্ন হইতেছে এবং মুখ শুষ্ক হইতেছে । ২৮
আমার শরীরে কম্প ও রোমাঞ্চ হইতেছে; হাত হইতে গাণ্ডীব খসিয়া পড়িতেছে এবং চর্ম জ্বালা করিতেছে । ২৯
হে কেশব, আমি স্থির থাকিতে পারিতেছি না; আমার মন যেন ঘুরিতেছে, আমি দুর্লক্ষণ সকল দেখিতেছি । ৩০
যুদ্ধে স্বজনদিগকে নিহত করিয়া আমি মঙ্গল দেখিতেছি না । হে কৃষ্ণ, আমি জয়লাভ করিতে চাহি না, রাজ্যও চাহি না, সুখভোগ চাহি না । ৩১
হে গোবিন্দ, যাহাদিগের জন্য রাজ্য, ভোগ, সুখাদি কামনা করা যায় সেই আচার্য্য, পিতৃব্য, পুত্র, পিতামহ, মাতুল, শ্বশুর, পৌত্র, শ্যালক ও কুটুম্বগণ যখন ধনপ্রাণ ত্যাগ স্বীকার করিয়াও যুদ্ধার্থে উপস্থিত, তখন আমাদের রাজ্যেই বা কি কাজ আর সুখভোগ বা জীবনেই বা কি কাজ ? হে মধুসূদন, যদি ইহারা আমাকে মারিয়াও ফেলে তথাপি আমি ইগাদিগকে মারিতে ইচ্ছা করি না । ৩২, ৩৩, ৩৪
হে কৃষ্ণ, পৃথিবীর রাজত্বের কথা দূরে থাক, ত্রৈলোক্যরাজ্যের জন্যই বা দুর্য্যোধনাদিগকে বধ করলে আমাদের কি সুখ হইবে ? ৩৫
যদিও ইহারা আততায়ী (এবং আততায়ী শাস্ত্রমতে বধ্য), তথাপি এই আচার্য্যাদি গুরুজনকে বধ করিলে আমরা পাপভাগীই হইব । অতএব আমরা সবান্ধব ধৃতরাষ্ট্রপুত্রদিগকে বধ করিতে পারি না; হে মাধব, স্বজন বধ করিয়া আমরা কি প্রকারে সুখী হইব ? ৩৬
যদিও ইহারা লোভে হতজ্ঞান হইয়া কুলক্ষয়জনিত দোষ এবং মিত্রদ্রোহজনিত পাতক দেখিতেছে না, কিন্তু হে জনার্দন, আমরা কূলক্ষয়জনিত দোষ দেখিয়াও সে পাপ হইতে নিবৃত্ত কেন না হইব ? ৩৭,৩৮
কূলক্ষয় হইলে সনাতন কূলধর্ম নষ্ট হয় এবং ধর্ম নষ্ট হইলে সমগ্র কূল অধর্মে অভিভূত হয় । ৩৯
হে কৃষ্ণ, কূল অধর্মে অভিভূত হইলে কূলস্ত্রীগণ ব্যভিচারিণী হয় । হে বার্ষ্ণেয়, কূলনারীগণ ব্যভিচারিণী হইলে বর্ণসঙ্কর জন্মে । ৪০
বর্ণসঙ্কর, কূলনাশকারীদিগের এবং কূলের নরকের কারণ হয় । শ্রাদ্ধ-তর্পণাদি ক্রিয়ার লোপ হওয়াতে ইহাদের পিতৃপুরুষ নরকে পতিত হয় (সদ্গতিপ্রাপ্ত হয় না) । ৪১
কূলনাশকারীদগের বর্ণসঙ্করকারক ঐ দোষে সনাতন জাতিধর্ম, কূলধর্ম ও আশ্রমধর্মাদি উৎসন্ন যায় । ৪২
হে জনার্দন, যে মনুষ্যদিগের কূলধর্ম উৎসন্ন যায়, তাহাদের নিয়ত নরকে বাস হয়, ইহা আমরা শুনিয়াছি । ৪৩
হায় ! আমরা রাজ্যসুখলোভে স্বজনগণকে বিনাশ করিতে উদ্যত হইয়া মহাপাপে প্রবৃত্ত হইয়াছি । ৪৪
আমি শস্ত্রত্যাগ করিয়া প্রতিকারে বিরত হইলে যদি অস্ত্রধারী দুর্য্যোধনাদি আমাকে যুদ্ধে বধ করে তাহাও আমার পক্ষে অধিকতর মঙ্গলকর হইবে । ৪৫
সঞ্জয় কহিলেন -
আমার শরীরে কম্প ও রোমাঞ্চ হইতেছে; হাত হইতে গাণ্ডীব খসিয়া পড়িতেছে এবং চর্ম জ্বালা করিতেছে । ২৯
হে কেশব, আমি স্থির থাকিতে পারিতেছি না; আমার মন যেন ঘুরিতেছে, আমি দুর্লক্ষণ সকল দেখিতেছি । ৩০
যুদ্ধে স্বজনদিগকে নিহত করিয়া আমি মঙ্গল দেখিতেছি না । হে কৃষ্ণ, আমি জয়লাভ করিতে চাহি না, রাজ্যও চাহি না, সুখভোগ চাহি না । ৩১
হে গোবিন্দ, যাহাদিগের জন্য রাজ্য, ভোগ, সুখাদি কামনা করা যায় সেই আচার্য্য, পিতৃব্য, পুত্র, পিতামহ, মাতুল, শ্বশুর, পৌত্র, শ্যালক ও কুটুম্বগণ যখন ধনপ্রাণ ত্যাগ স্বীকার করিয়াও যুদ্ধার্থে উপস্থিত, তখন আমাদের রাজ্যেই বা কি কাজ আর সুখভোগ বা জীবনেই বা কি কাজ ? হে মধুসূদন, যদি ইহারা আমাকে মারিয়াও ফেলে তথাপি আমি ইগাদিগকে মারিতে ইচ্ছা করি না । ৩২, ৩৩, ৩৪
হে কৃষ্ণ, পৃথিবীর রাজত্বের কথা দূরে থাক, ত্রৈলোক্যরাজ্যের জন্যই বা দুর্য্যোধনাদিগকে বধ করলে আমাদের কি সুখ হইবে ? ৩৫
যদিও ইহারা আততায়ী (এবং আততায়ী শাস্ত্রমতে বধ্য), তথাপি এই আচার্য্যাদি গুরুজনকে বধ করিলে আমরা পাপভাগীই হইব । অতএব আমরা সবান্ধব ধৃতরাষ্ট্রপুত্রদিগকে বধ করিতে পারি না; হে মাধব, স্বজন বধ করিয়া আমরা কি প্রকারে সুখী হইব ? ৩৬
যদিও ইহারা লোভে হতজ্ঞান হইয়া কুলক্ষয়জনিত দোষ এবং মিত্রদ্রোহজনিত পাতক দেখিতেছে না, কিন্তু হে জনার্দন, আমরা কূলক্ষয়জনিত দোষ দেখিয়াও সে পাপ হইতে নিবৃত্ত কেন না হইব ? ৩৭,৩৮
কূলক্ষয় হইলে সনাতন কূলধর্ম নষ্ট হয় এবং ধর্ম নষ্ট হইলে সমগ্র কূল অধর্মে অভিভূত হয় । ৩৯
হে কৃষ্ণ, কূল অধর্মে অভিভূত হইলে কূলস্ত্রীগণ ব্যভিচারিণী হয় । হে বার্ষ্ণেয়, কূলনারীগণ ব্যভিচারিণী হইলে বর্ণসঙ্কর জন্মে । ৪০
বর্ণসঙ্কর, কূলনাশকারীদিগের এবং কূলের নরকের কারণ হয় । শ্রাদ্ধ-তর্পণাদি ক্রিয়ার লোপ হওয়াতে ইহাদের পিতৃপুরুষ নরকে পতিত হয় (সদ্গতিপ্রাপ্ত হয় না) । ৪১
কূলনাশকারীদগের বর্ণসঙ্করকারক ঐ দোষে সনাতন জাতিধর্ম, কূলধর্ম ও আশ্রমধর্মাদি উৎসন্ন যায় । ৪২
হে জনার্দন, যে মনুষ্যদিগের কূলধর্ম উৎসন্ন যায়, তাহাদের নিয়ত নরকে বাস হয়, ইহা আমরা শুনিয়াছি । ৪৩
হায় ! আমরা রাজ্যসুখলোভে স্বজনগণকে বিনাশ করিতে উদ্যত হইয়া মহাপাপে প্রবৃত্ত হইয়াছি । ৪৪
আমি শস্ত্রত্যাগ করিয়া প্রতিকারে বিরত হইলে যদি অস্ত্রধারী দুর্য্যোধনাদি আমাকে যুদ্ধে বধ করে তাহাও আমার পক্ষে অধিকতর মঙ্গলকর হইবে । ৪৫
সঞ্জয় কহিলেন -
শোকাকুলিত অর্জুন এইরূপ বলিয়া যুদ্ধমধ্যে ধনুর্বাণ ত্যাগ করিয়া রথোপরি উপবেশন করিলেন । ৪৬
___________________________
১) সঞ্জয়ের দিব্যচক্ষু প্রাপ্তি
যুদ্ধারম্ভের পূর্বে ব্যাসদেব অন্ধরাজকে যুদ্ধদর্শনার্থ দিব্যচক্ষু প্রদান করিতে চাহিলেন । ধৃতরাষ্ট্র তাহাতে অসম্মত হইয়া বলিলেন - আমি জ্ঞাতি-কুটুম্বের নিধন দেখিতে চাই না, আপনার তপঃপ্রভাবে যাহাতে যুদ্ধের সমস্ত বৃত্তান্ত যথাযথ শ্রবণ করিতে পারি, আপনি তাহাই করুন । তখন ব্যাসদেব রাজ-অমাত্য সঞ্জয়কে বর প্রদান করেন । সেই বরপ্রভাবে তিনি দিব্যদৃষ্টি লাভ করিয়া যুদ্ধাদি সন্দর্শন ও উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের বাক্যাদি-শ্রবণ ও মনোভাব সমস্ত পরিজ্ঞাত হইয়া ধৃতরাষ্ট্রের নিকট বর্ণনা করিয়াছিলেন । গীতার সমস্তই সঞ্জয়-বাক্য [মভাঃ|ভীঃ|১|২৪] । 'পরম যোগশক্তির আধার মহামুনি ব্যাস যে এই দিব্য চক্ষু সঞ্জয়কে দিতে সক্ষম ছিলেন, তাহা অবিশ্বাস করিবার কোনো কারণ দেখিতে পাই না' - শ্রীঅরবিন্দ ।
ধর্মক্ষেত্র - যুদ্ধক্ষেত্র কুরুক্ষেত্র
কুরুক্ষেত্র চিরকালই পরম পুণ্যভূমি বলিয়া পরিচিত । জাবাল উপনিষদে ও শতপথব্রাহ্মণে ইহাকে দেবযজন অর্থাৎ দেবতাদের 'যজ্ঞস্থান' বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে । ইহার প্রাচীন নাম সমন্তপঞ্চক । পরশুরাম একুশ বার পৃথিবী নিঃক্ষত্রিয় করিয়া এই স্থানে পিতৃ-তর্পণ করিয়াছিলেন । দুর্যোধনাদির পূর্বপুরুষ বিখ্যাত কুরু রাজা এই স্থানে হল-চালনা করিয়া এই বর লাভ করিয়াছিলেন যে, যে-ব্যক্তি এই স্থানে তপস্যা করিবে অথবা যুদ্ধে প্রাণত্যাগ করিবে, সে স্বর্গে গমন করিবে । তদবধিই ইহার নাম কুরুক্ষেত্র । প্রাচীন গ্রন্থাদীতে সর্বত্রই কুরুক্ষেত্রকে ধর্মক্ষেত্র বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে । বনপর্বের তীর্থযাত্রা পর্বাধ্যায়ে কুরুক্ষেত্রকে তিন লোকের মধ্যে শ্রেষ্ঠ তীর্থস্থান বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে; সুতরাং 'ধর্মক্ষেত্র' এই বিশেষণটি একান্ত সুসঙ্গত ও প্রয়োজনীয় ।
৩) 'আপনার ধীমান শিষ্য' - এ-কথাটি দুর্যোধন শ্লেষাত্মক ভাবেই ব্যবহার করিয়াছেন । আবার 'ধৃষ্টদ্যুম্ন' না বলিয়া 'দ্রুপদপুত্র' বলিয়া দ্রোণাচার্যের পূর্বশত্রুতা স্মরণ করাইয়া দিতেছেন ।
৫) কুন্তিভোজঃ পুরুজিৎ - একই ব্যক্তি, ইনি ভীমসেনাদির মাতুল । কুন্তিভোজ কৌলিক নাম ।
৬) মহারথ = যিনি একাকী দশ-সহস্র ধনুর্ধারীর সহিত যুদ্ধ করেন এবং যিনি শস্ত্রশাস্ত্রে প্রবীণ, তিনিই মহারথ ।
৮) সমিতিঞ্জয়ঃ = সমিতি(সংগ্রামে) জয় লাভ করে যে অর্থাৎ যুদ্ধজয়ী ।
সৌমদত্তিঃ = সোমদত্ত-পুত্র বিখ্যাত ভূরিশ্রবা ।
১০) পর্যাপ্ত = যাহা আয়ত্ত করা যায়, পরিমাণ করা যায় অর্থাৎ পরিমিত, সীমাবদ্ধ । অর্থান্তরে যথেষ্ট, সমর্থ ।
অপর্যাপ্ত = অপরিমিত, অসংখ্য । অর্থান্তরে অপ্রচুর, অসমর্থ ।
এই অনুবাদে প্রথম অর্থই গ্রহণ করে তাৎপর্য এইভাবে ব্যাখ্যা করা হইয়াছে - 'আমাদের সৈন্য অপরিমিত অর্থাৎ বৃহৎ, তাহাতে বীরশ্রেষ্ঠ ভীষ্ম আমাদের সেনাপতি; আর উহাদের সৈন্য পরিমিত অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র, আর নগন্য ভীম উহাদের সেনাপতি - সুতরাং আমাদের জয় হইবে না কেন ?'
শ্রীধর স্বামীর টীকায় শেষোক্ত ব্যাখ্যাই আছে । এঁনার মতে, পরের শ্লোকে 'সকলে ভীষ্মকে রক্ষা করুন' এ-কথায় বুঝা যায় যে, দুর্যোধনের মনে কিছু ভয়ের উদ্রেক হইয়াছিল এবং তিনি নিজের সৈন্যবল অপ্রচুর বা অসমর্থ মনে করিতেছেন । কিন্তু দুর্যোধনের ভয় পাওয়ার কথা মহাভারতে কোথাও নাই । বরং ঠিক ইহার বিপরীত কথাই আছে [মভাঃ|উঃ|১-৬৯, মভাঃ|ভীঃ|৫১|৬|৯] যাহা হইতে বুঝা যায় যে সকলকে উৎসাহ-দানার্থই এ-সকল কথা বলা হইয়াছিল । এই কারণে লোকমান্য তিলক প্রমুখ অনেকে পূর্বোক্ত প্রথম অর্থই গ্রহণ করিয়াছেন ।
১১) 'সকলে ভীষ্মকে রক্ষা করুন' - দুর্যোধনের এই আশঙ্কার তাৎপর্য
ভীষ্ম সমরে অপরাজেয়, তথাপি তাঁহার জন্য দুর্যোধনের এত আশঙ্কা কেন ? দুর্যোধন পূর্বেই এই আশঙ্কা ব্যক্ত করিয়াছেন - 'ভীষ্ম একাই সসৈন্য পাণ্ডবকে বধ করিতে পারেন, কিন্তু তিনি শিখণ্ডীকে বধ করিবেন না, সুতরাং সকলে সতর্ক হইয়া সর্ব দিক হইতে ভীষ্মকে রক্ষা করিবেন, আমরা যেন জম্বুক-শিখণ্ডী দ্বারা অতর্কিতভাবে ভীষ্মসিংহকে বধ না করাই' [মভাঃ|ভীঃ|১৫|১৪-২০] ।
১৩) পণব = মৃদঙ্গ, আনক = ঢাক, গোমুখ = রণশঙ্খ; সেকালের বিউগ্ল্ (bugle) ছিল শঙ্খ ।
২৪) ভারত = দুষ্মন্ত-রাজার পুত্র ভরতের বংশধর, এখানে ধৃতরাষ্ট্র ।
গুড়াকেশেন = গুড়াকা (নিদ্রা, আলস্য), তাহার ঈশ, অর্থাৎ নিদ্রালস্যজয়ী, এখানে অর্জুন ।
হৃষীকেশঃ = হৃষীক ইন্দ্রিয়, তাহার ঈশ, অর্থাৎ ইন্দ্রিয়গণের প্রভু, শ্রীকৃষ্ণ ।
৩৬) আততায়ী (assassin)
অগ্নিদো গরদশ্চৈব শস্ত্রপাণির্ধনাপহঃ । ক্ষেত্রদারাপহারী চ ষড়েতে আততায়িনঃ ।।
ছয়জন আততায়ী - (i)অগ্নিদ (যে ঘরে আগুন দেয়), (ii)গরদ (যে বিষ দেয়), (iii)বধার্থ অস্ত্রধারী, (iv)ধনাপহারী, (v)ভূমি-অপহারী ও (vi)দারা-হরণকারী ।
দুর্যোধনাদি প্রায় এ-সমস্ত কর্মই করিয়াছেন; সুতরাং তাহারা আততায়ী ।
Six types of assassin (who can be killed as per law) : one who (i)commits arson, (ii)gives poison, (iii)wields weapon to kill, (iv)steals wealth, (v)steals land, (vi)steals wife.
অর্থশাস্ত্রমতে (law) আততায়ী বধ্য [মনু|৮|৩৫০-৫১] । কিন্তু ধর্মশাস্ত্রমতে (morality) "অহিংসা পরমো ধর্মঃ', 'গুরুজনাদিরবধ্যঃ', 'ন পাপে প্রতিপাপঃ স্যাৎ' ইত্যাদি । অর্থশাস্ত্র হইতে ধর্মশাস্ত্র বলবৎ । সুতরাং আততায়ী হইলেও গুরুজনাদি-বধে পাপভাগী হইতে হইবে, ইহাই অর্জুনোক্তির মর্ম ।
৪২) বর্ণধর্ম = ব্রাহ্মণের অধ্যাপনাদি, ক্ষত্রিয়ের প্রজারক্ষাদি, বৈশ্যের কৃষি-বাণিজ্যাদি, শূদ্রের পরিচর্যাদি । (অর্জুন এস্থলে জাতিধর্ম ও বর্ণধর্ম সমার্থক রূপে ব্যবহার করিয়াছেন কিন্তু মানুষের জাতি তার জন্মের সহিত সম্পর্কিত আর শ্রীকৃষ্ণের বর্ণ মানুষের গুণের ও কর্মের সহিত সম্পর্কিত [গীতা|৪|১৩], uploader's comment ।) বর্ণ বনাম জাতি
কুলধর্ম = কৌলিক উপাসনা-পদ্ধতি ও আচার-নিয়মাদি ।
আশ্রমধর্ম = ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ, সন্ন্যাস ।
___________________________
Online Source:
http://geetabangla.blogspot.com/2011/08/blog-post_20.html
১) সঞ্জয়ের দিব্যচক্ষু প্রাপ্তি
যুদ্ধারম্ভের পূর্বে ব্যাসদেব অন্ধরাজকে যুদ্ধদর্শনার্থ দিব্যচক্ষু প্রদান করিতে চাহিলেন । ধৃতরাষ্ট্র তাহাতে অসম্মত হইয়া বলিলেন - আমি জ্ঞাতি-কুটুম্বের নিধন দেখিতে চাই না, আপনার তপঃপ্রভাবে যাহাতে যুদ্ধের সমস্ত বৃত্তান্ত যথাযথ শ্রবণ করিতে পারি, আপনি তাহাই করুন । তখন ব্যাসদেব রাজ-অমাত্য সঞ্জয়কে বর প্রদান করেন । সেই বরপ্রভাবে তিনি দিব্যদৃষ্টি লাভ করিয়া যুদ্ধাদি সন্দর্শন ও উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের বাক্যাদি-শ্রবণ ও মনোভাব সমস্ত পরিজ্ঞাত হইয়া ধৃতরাষ্ট্রের নিকট বর্ণনা করিয়াছিলেন । গীতার সমস্তই সঞ্জয়-বাক্য [মভাঃ|ভীঃ|১|২৪] । 'পরম যোগশক্তির আধার মহামুনি ব্যাস যে এই দিব্য চক্ষু সঞ্জয়কে দিতে সক্ষম ছিলেন, তাহা অবিশ্বাস করিবার কোনো কারণ দেখিতে পাই না' - শ্রীঅরবিন্দ ।
ধর্মক্ষেত্র - যুদ্ধক্ষেত্র কুরুক্ষেত্র
কুরুক্ষেত্র চিরকালই পরম পুণ্যভূমি বলিয়া পরিচিত । জাবাল উপনিষদে ও শতপথব্রাহ্মণে ইহাকে দেবযজন অর্থাৎ দেবতাদের 'যজ্ঞস্থান' বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে । ইহার প্রাচীন নাম সমন্তপঞ্চক । পরশুরাম একুশ বার পৃথিবী নিঃক্ষত্রিয় করিয়া এই স্থানে পিতৃ-তর্পণ করিয়াছিলেন । দুর্যোধনাদির পূর্বপুরুষ বিখ্যাত কুরু রাজা এই স্থানে হল-চালনা করিয়া এই বর লাভ করিয়াছিলেন যে, যে-ব্যক্তি এই স্থানে তপস্যা করিবে অথবা যুদ্ধে প্রাণত্যাগ করিবে, সে স্বর্গে গমন করিবে । তদবধিই ইহার নাম কুরুক্ষেত্র । প্রাচীন গ্রন্থাদীতে সর্বত্রই কুরুক্ষেত্রকে ধর্মক্ষেত্র বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে । বনপর্বের তীর্থযাত্রা পর্বাধ্যায়ে কুরুক্ষেত্রকে তিন লোকের মধ্যে শ্রেষ্ঠ তীর্থস্থান বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে; সুতরাং 'ধর্মক্ষেত্র' এই বিশেষণটি একান্ত সুসঙ্গত ও প্রয়োজনীয় ।
৩) 'আপনার ধীমান শিষ্য' - এ-কথাটি দুর্যোধন শ্লেষাত্মক ভাবেই ব্যবহার করিয়াছেন । আবার 'ধৃষ্টদ্যুম্ন' না বলিয়া 'দ্রুপদপুত্র' বলিয়া দ্রোণাচার্যের পূর্বশত্রুতা স্মরণ করাইয়া দিতেছেন ।
৫) কুন্তিভোজঃ পুরুজিৎ - একই ব্যক্তি, ইনি ভীমসেনাদির মাতুল । কুন্তিভোজ কৌলিক নাম ।
৬) মহারথ = যিনি একাকী দশ-সহস্র ধনুর্ধারীর সহিত যুদ্ধ করেন এবং যিনি শস্ত্রশাস্ত্রে প্রবীণ, তিনিই মহারথ ।
৮) সমিতিঞ্জয়ঃ = সমিতি(সংগ্রামে) জয় লাভ করে যে অর্থাৎ যুদ্ধজয়ী ।
সৌমদত্তিঃ = সোমদত্ত-পুত্র বিখ্যাত ভূরিশ্রবা ।
১০) পর্যাপ্ত = যাহা আয়ত্ত করা যায়, পরিমাণ করা যায় অর্থাৎ পরিমিত, সীমাবদ্ধ । অর্থান্তরে যথেষ্ট, সমর্থ ।
অপর্যাপ্ত = অপরিমিত, অসংখ্য । অর্থান্তরে অপ্রচুর, অসমর্থ ।
এই অনুবাদে প্রথম অর্থই গ্রহণ করে তাৎপর্য এইভাবে ব্যাখ্যা করা হইয়াছে - 'আমাদের সৈন্য অপরিমিত অর্থাৎ বৃহৎ, তাহাতে বীরশ্রেষ্ঠ ভীষ্ম আমাদের সেনাপতি; আর উহাদের সৈন্য পরিমিত অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র, আর নগন্য ভীম উহাদের সেনাপতি - সুতরাং আমাদের জয় হইবে না কেন ?'
শ্রীধর স্বামীর টীকায় শেষোক্ত ব্যাখ্যাই আছে । এঁনার মতে, পরের শ্লোকে 'সকলে ভীষ্মকে রক্ষা করুন' এ-কথায় বুঝা যায় যে, দুর্যোধনের মনে কিছু ভয়ের উদ্রেক হইয়াছিল এবং তিনি নিজের সৈন্যবল অপ্রচুর বা অসমর্থ মনে করিতেছেন । কিন্তু দুর্যোধনের ভয় পাওয়ার কথা মহাভারতে কোথাও নাই । বরং ঠিক ইহার বিপরীত কথাই আছে [মভাঃ|উঃ|১-৬৯, মভাঃ|ভীঃ|৫১|৬|৯] যাহা হইতে বুঝা যায় যে সকলকে উৎসাহ-দানার্থই এ-সকল কথা বলা হইয়াছিল । এই কারণে লোকমান্য তিলক প্রমুখ অনেকে পূর্বোক্ত প্রথম অর্থই গ্রহণ করিয়াছেন ।
১১) 'সকলে ভীষ্মকে রক্ষা করুন' - দুর্যোধনের এই আশঙ্কার তাৎপর্য
ভীষ্ম সমরে অপরাজেয়, তথাপি তাঁহার জন্য দুর্যোধনের এত আশঙ্কা কেন ? দুর্যোধন পূর্বেই এই আশঙ্কা ব্যক্ত করিয়াছেন - 'ভীষ্ম একাই সসৈন্য পাণ্ডবকে বধ করিতে পারেন, কিন্তু তিনি শিখণ্ডীকে বধ করিবেন না, সুতরাং সকলে সতর্ক হইয়া সর্ব দিক হইতে ভীষ্মকে রক্ষা করিবেন, আমরা যেন জম্বুক-শিখণ্ডী দ্বারা অতর্কিতভাবে ভীষ্মসিংহকে বধ না করাই' [মভাঃ|ভীঃ|১৫|১৪-২০] ।
১৩) পণব = মৃদঙ্গ, আনক = ঢাক, গোমুখ = রণশঙ্খ; সেকালের বিউগ্ল্ (bugle) ছিল শঙ্খ ।
২৪) ভারত = দুষ্মন্ত-রাজার পুত্র ভরতের বংশধর, এখানে ধৃতরাষ্ট্র ।
গুড়াকেশেন = গুড়াকা (নিদ্রা, আলস্য), তাহার ঈশ, অর্থাৎ নিদ্রালস্যজয়ী, এখানে অর্জুন ।
হৃষীকেশঃ = হৃষীক ইন্দ্রিয়, তাহার ঈশ, অর্থাৎ ইন্দ্রিয়গণের প্রভু, শ্রীকৃষ্ণ ।
৩৬) আততায়ী (assassin)
অগ্নিদো গরদশ্চৈব শস্ত্রপাণির্ধনাপহঃ । ক্ষেত্রদারাপহারী চ ষড়েতে আততায়িনঃ ।।
ছয়জন আততায়ী - (i)অগ্নিদ (যে ঘরে আগুন দেয়), (ii)গরদ (যে বিষ দেয়), (iii)বধার্থ অস্ত্রধারী, (iv)ধনাপহারী, (v)ভূমি-অপহারী ও (vi)দারা-হরণকারী ।
দুর্যোধনাদি প্রায় এ-সমস্ত কর্মই করিয়াছেন; সুতরাং তাহারা আততায়ী ।
Six types of assassin (who can be killed as per law) : one who (i)commits arson, (ii)gives poison, (iii)wields weapon to kill, (iv)steals wealth, (v)steals land, (vi)steals wife.
অর্থশাস্ত্রমতে (law) আততায়ী বধ্য [মনু|৮|৩৫০-৫১] । কিন্তু ধর্মশাস্ত্রমতে (morality) "অহিংসা পরমো ধর্মঃ', 'গুরুজনাদিরবধ্যঃ', 'ন পাপে প্রতিপাপঃ স্যাৎ' ইত্যাদি । অর্থশাস্ত্র হইতে ধর্মশাস্ত্র বলবৎ । সুতরাং আততায়ী হইলেও গুরুজনাদি-বধে পাপভাগী হইতে হইবে, ইহাই অর্জুনোক্তির মর্ম ।
৪২) বর্ণধর্ম = ব্রাহ্মণের অধ্যাপনাদি, ক্ষত্রিয়ের প্রজারক্ষাদি, বৈশ্যের কৃষি-বাণিজ্যাদি, শূদ্রের পরিচর্যাদি । (অর্জুন এস্থলে জাতিধর্ম ও বর্ণধর্ম সমার্থক রূপে ব্যবহার করিয়াছেন কিন্তু মানুষের জাতি তার জন্মের সহিত সম্পর্কিত আর শ্রীকৃষ্ণের বর্ণ মানুষের গুণের ও কর্মের সহিত সম্পর্কিত [গীতা|৪|১৩], uploader's comment ।) বর্ণ বনাম জাতি
কুলধর্ম = কৌলিক উপাসনা-পদ্ধতি ও আচার-নিয়মাদি ।
আশ্রমধর্ম = ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ, সন্ন্যাস ।
___________________________
Online Source:
http://geetabangla.blogspot.com/2011/08/blog-post_20.html
*Hard Copy Source:
"Sri Gita" or "Srimadbhagabadgeeta" by Gitashastri Jagadish Chandra Ghosh & Anil Chandra Ghosh. 26th Edition - June 1997 (1st Edition, 1925 from Dhaka now in Bangladesh). Published by Subhadra Dey (Ghosh), Presidency Library, 15 Bankim Chatterjee Street, Kolkata-700073. Printed by Web Impressions Pvt.Ltd., 34/2 Beadon Street, Kolkata-700006.
Disclaimer: This site is not officially related to Presidency Library, Kolkata. This is a personal, non-commercial, research-oriented effort of a novice religious wanderer.
এটি আধ্যাত্মিক পথের এক অর্বাচীন পথিকের ব্যক্তিগত, অবাণিজ্যিক, গবেষণা-ধর্মী প্রয়াস মাত্র ।
No comments:
Post a Comment