Sunday, July 27, 2014

শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতা : নবম অধ্যায় – রাজযোগ (Gita : Chapter 9)

||||||||৯|১০|১১|১২|১৩|১৪|১৫|১৬|১৭|১৮
 (স্বামী জগদীশ্বরানন্দ)*
 
শ্রীভগবান্‌ বলিলেন -
হে অর্জুন, তোমার দোষদৃষ্টি নাই; সেই জন্য অতিগুহ্য অনুভবযুক্ত এই ব্রহ্মজ্ঞান তোমাকে বলিব । তাহা লাভ করিলে তুমি সংসারবন্ধন হইতে সদ্যোমুক্ত হইবে । ১

এই ব্রহ্মবিদ্যা সর্ববিদ্যার মধ্যে শ্রেষ্ঠ । উহা উত্তম, পবিত্র, সাক্ষাৎ ফলপ্রদ, ধর্মসঙ্গত, সহজসাধ্য ও অক্ষয়ফলযুক্ত । ২

হে অর্জুন, ব্রহ্মজ্ঞানসাধক এই ধর্মের স্বরূপ ও ফলের প্রতি শ্রদ্ধাহীন ব্যক্তিগণ আমাকে না পাইয়া মৃত্যুময় সংসারপথে পুনঃপুনঃ যাতায়াত করে । ৩

আমি ইন্দ্রিয়ের অগোচর ও অব্যক্তমূর্তি; আমার দ্বারা এই সমগ্র বিশ্ব পরিব্যাপ্ত । ব্রহ্মাদি স্থাবর পর্যন্ত সমস্ত ভূত আমাতে অবস্থিত; কিন্তু আমি আকাশবৎ অপরিচ্ছিন্ন অসংসর্গী বলিয়া তৎসমুদয়ে আধেয়ভাবে অবস্থিত নহি । ৪

আমার ঈশ্বরীয় যোগ দর্শন কর । বস্তুতঃ ব্রহ্মাদিস্তম্ভপর্যন্ত ভূতগণ সর্বসঙ্গবর্জিত আমাতে পারমার্থিকভাবে অবস্থিত নহে; অসংসর্গীত্ব নিবন্ধন আমার আত্মা ভূতগণে অবস্থিত না হইয়াও তাহাদের ধারক ও জনক । ৫

সর্বত্র বিচরণশীল মহাবায়ু যেরূপ আকাশে অসঙ্গভাবে অবস্থান করে, সেইরূপ সর্বব্যাপী ও অসংশ্লিষ্ট মৎস্বরূপে ভূতসমূহ স্থিতিকালে অবস্থিত জানিও । ৬

হে কৌন্তেয়, প্রলয়কালে সকল ভূত আমার ত্রিগুণাত্মিকা মায়াতে লীন হয় । আবার সৃষ্টিকালে আমি তাহাদিগকে সৃষ্টি করি । ৭

স্বীয় অবিদ্যারূপ মায়াকে বশীভূত করিয়া প্রকৃতিপরতন্ত্র এবং জন্মমৃত্যু-অধীন ভূতগণকে আমি পুনঃপুনঃ সৃষ্টি করি । ৮

হে ধনঞ্জয়, আমি অনাসক্ত ও উদাসীন (উদাসীনবৎ, উদাসীন নয়) পুরুষের ন্যায় অবস্থিত বলিয়া আমাকে সেই সকল কর্ম আবদ্ধ করিতে পারে না । ৯

কারণ হে কৌন্তেয়, আমার অধ্যক্ষতা দ্বারা ত্রিগুণাত্মিকা মায়া এই চরাচর ঈশ্বর সৃষ্টি করে । আমি সকলের স্রষ্ঠা, সত্তা, সাক্ষিরূপে অধিষ্ঠিত বলিয়া এই ব্যক্ত ও অব্যক্ত জগৎ বিবিধরূপে পরিবর্তিত হয় । ১০

আমি নিত্য-শুদ্ধ-বুদ্ধ-মুক্ত-স্বভাব এবং সকলের অন্তরাত্মা হইলেও মনুষ্য দেহ আশ্রয়পূর্বক ব্যবহার করি বলিয়া মূঢ়গণ আমার পরমাত্মতত্ত্ব না জানিয়া আমাকে অবজ্ঞা করে । ১১

বৃথাশা বিফলকর্মা ও নিষ্ফলজ্ঞান অবিবেকিগণ স্বাত্মভূত আমাকে অবজ্ঞা করার জন্য তামসী ও রাজসী মোহিনী (দেহাত্মবুদ্ধিকরী) প্রকৃতি প্রাপ্ত হইয়া থাকে । ১২

কিন্তু হে পার্থ, মহাত্মাগণ শম, দম, দয়া ও শ্রদ্ধাদিযুক্ত সাত্বিক স্বভাব আশ্রয় করিয়া আমাকে সর্বভূতের কারণ ও অবিনাশী জানিয়া অনন্য চিত্তে আমার ভজনা করেন । ১৩

ব্রহ্মচর্যাদিব্রতে দৃঢ়নিষ্ঠ ও যত্নশীল সেই ভক্তগণ সর্বদা আমার কীর্তন করিয়া ও ভক্তিপূর্বক নমস্কারাদি দ্বারা সদা সমাহিত হইয়া আমার উপাসনা করেন । ১৪

অন্য কেহ কেহ ভগবদ্বিষয়ক জ্ঞানরূপ যজ্ঞ দ্বারা আমার উপাসনা করেন। যথা - কেহ বা ব্রহ্মাত্মৈকত্বরূপ পরমার্থ দর্শন দ্বারা, কেহ কেহ বা পৃথক পৃথক ভাবে ভগবানই চন্দ্রাদিত্যাদিরূপে অবস্থিত জানিয়া, কেহ কেহ বা আমাকে বিশ্বমূর্তি ভগবান্‌ ভাবিয়া - বহু প্রকারে উপাসনা করেন । ১৫ 

আমি অগ্নিষ্টোমাদি শ্রৌত যজ্ঞ, আমি পঞ্চস্মার্ত যজ্ঞ, আমি পিত্রর্থ শ্রাদ্ধাদি, আমি ভেষজ, আমি মন্ত্র, আমি হোমের ঘৃত, আমি হোমাগ্নি এবং আমিই হোমক্রিয়া । ১৬

আমিই এই জগতের পিতা, মাতা ও সর্ব প্রাণীর কর্মফলদাতা, পিতামহ এবং একমাত্র জ্ঞেয় ও পরিশুদ্ধিকর বস্তু। আমিই ওঙ্কার এবং আমিই ঋগ্‌বেদ, সামবেদ ও যজুর্বেদস্বরূপ । ১৭

আমিই প্রাণীর পরাগতি ও পরিপালক । আমিই প্রভু ও সকল প্রাণীর বাসস্থান ও তাহাদের কৃতাকৃতের সাক্ষী । আমিই রক্ষক ও প্রত্যুপকারনিরপেক্ষ হিতকারী । আমিই স্রষ্ঠা ও সংহর্তা । আমিই আধার ও প্রলয়স্থান এবং আমিই জগতের অক্ষয় কারণ । ১৮

সূর্যরূপে আমি উত্তাপ বিকিরণ করি এবং জল আকর্ষণ ও বর্ষণ করি । আমি অমরগণের অমৃত ও মর্ত্যগণের মৃত্যু এবং আমি স্থূল ও সূক্ষ বস্তু । ১৯

ত্রিবেদজ্ঞগণ যজ্ঞানুষ্ঠান দ্বারা আমাকে আরাধনা করিয়া যজ্ঞাবশিষ্ট সোমরসপানে পাপমুক্ত হন এবং স্বর্গকামনা করেন । তাঁহারা পুণ্যকর্মের ফলস্বরূপ ইন্দ্রলোক লাভ করিয়া অপ্রাকৃত দেবভোগ উপভোগ করেন । ২০

তাঁহারা সেই বিপুল স্বর্গলোক উপভোগ করিয়া পুণ্যক্ষয় হইলে মর্ত্যলোকে ফিরিয়া আসেন । এইরূপে ত্রিবেদোক্ত ধর্মের অনুষ্ঠান করিয়া ভোগকামী ব্যক্তিগণ সংসারে যাতায়াত করেন । ২১

আমাকেই (শ্রীভগবান্‌কেই) আত্মভাবে চিন্তাপূর্বক যে সর্বত্যাগীগণ আমার ধ্যান করেন, সেই নিত্য-সমাহিত মুমুক্ষুগণের যোগ ও ক্ষেম আমি বহন করি । ২২ 

[যেহেতু অন্যান্য দেবতারূপে ভগবান্‌ই স্বয়ং অবস্থিত, সেইজন্য অন্য দেবতার উপাসনাও ভগবানেরই উপাসনা । বিভিন্ন ইষ্টদেবতার মধ্যে অভিন্ন ঈশ্বরই সম্পূর্ণরূপে বিরাজিত । এইজন্য - ]

হে কৌন্তেয়, যাঁহারা আস্তিক্যবুদ্ধিতে দৃঢ়প্রতিষ্ঠ হইয়া ভক্তিপূর্বক অন্য দেবতার পূজা করেন, তাঁহারাও অজ্ঞানপূর্বক আমারই পূজা করেন । ২৩

দেবতাগণের আত্মরূপে আমি সকল শ্রৌত ও স্মার্ত যজ্ঞের ভোক্তা ও ফলদাতা; কিন্তু অন্য দেবতার ভক্তগণ আমাকে স্বরূপতঃ জানেন না বলিয়া তাহারা আবার সংসারে প্রত্যাবর্তন করেন । ২৪ 

দেবোপাসকগণ ইন্দ্রাদি দেবগণকে প্রাপ্ত হন, শ্রাদ্ধাদিনিষ্ঠ পিতৃভক্তগণ অগ্নিষ্বাত্ত ও অর্যমাদি পিতৃগণকে প্রাপ্ত হন, ভূতোপাসকগণ বিনায়ক ও চতুর্ভগিন্যাদি ভূতগণকে লাভ করেন এবং আমার উপাসকগণ আমাকেই লাভ করেন । ২৫

যে শুভবুদ্ধি নিষ্কাম ভক্ত আমাকে ভক্তিপূর্বক পত্র, পুষ্প, ফল ও জল অর্পণ করেন, আমি তাঁহার সেই ভক্তিপূত উপহার প্রীতির সহিত গ্রহণ করি । ২৬

অতএব হে কৌন্তেয়, যাহা অনুষ্ঠান কর, যাহা আহার কর, যাহা হোম কর, যাহা দান কর এবং যে তপস্যা কর, সেই সমস্ত আমাকে সমর্পণ করিবে । ২৭

এইরূপে আমাতে সমস্ত কর্ম অর্পণ দ্বারা শুভাশুভ ফলবিশিষ্ট কর্মের বন্ধন হইতে মুক্ত হইবে । আমাতে শুভাশুভ কর্ম-সমর্পণরূপ সন্ন্যাসযোগে যুক্ত হইয়া জীবিতকালেই মুক্তি লাভ করিবে এবং দেহান্তে আমাকেই প্রাপ্ত হইবে । ইহার অর্থ, পুনরায় আর দেহধারণ করিতে হইবে না । ২৮

আমি সকল ভূতে সমানভাবে বিরাজ করি, আমার প্রিয় ও অপ্রিয় নাই, কিন্তু যাঁহারা ভক্তিপূর্বক আমাকে ভজনা করেন, তাঁহারা স্বভাবতই আমাতে অবস্থান করেন এবং আমিও স্বভাবতই তাঁহাদের হৃদয়ে বাস করি । ২৯

[অগ্নি তৎসমীপে আগমনকারীদিগের শীত অপনয়ন করেন, কিন্তু অগ্নি হইতে দূরে থাকিলে শীত নিবারিত হয় না । এই জন্য অগ্নির যে রাগদ্বেষ আছে, তাহা নহে । ভগবান্‌ও সেইরূপ ভক্তকে অনুগৃহীত করেন, অভক্তকে করেন না বলিয়া তাঁহার রাগদ্বেষ আছে বলা যায় না । ভগবদ্‌ভক্তির মাহাত্ম্য শ্রবণ কর -]

অতি দুরাচার ব্যক্তিও যদি অনন্য ভক্তির সহিত আমাকে ভজনা করেন, তাঁহাকে সাধু বলিয়া মনে করিবে, কারণ তাঁহার সঙ্কল্প অতি শুভ । ৩০

উনি শীঘ্র ধার্মিক হন ও চির শান্তিলাভ করেন । হে কৌন্তেয়, আমার ভক্ত কখনও বিনষ্ট হন না, ইহা নিশ্চিত জানিও এবং সানন্দে জগতে প্রচার কর । ৩১

হে পার্থ, নিকৃষ্টজন্মা ব্যক্তিগণ (অন্ত্যজ) এবং স্ত্রী, বৈশ্য ও শুদ্রগণও আমাকে আশ্রয় করিয়া শ্রেষ্ঠ গতি লাভ করে । ৩২

পুণ্যজন্মা ব্রাহ্মণ (পুণ্যাঃ ব্রাহ্মণাঃ)*, ভক্ত এবং ক্ষত্রিয়গণের (তথা ভক্তাঃ রাজর্ষয়ঃ)* আর কথা কি ? তাঁহারা আমাকে আশ্রয় করিলে নিশ্চয়ই পরা গতি (পরম মুক্তি) লাভ করিবেন । অতএব, যখন অনিত্য সুখহীন মর্ত্যলোকে মনুষ্যদেহ ধারণ করিয়াছ, তখন অন্যান্য সকল কর্তব্য ত্যাগ করিয়া আমাকেই ভজনা কর । ৩৩
[অনুবাদান্তরে পুণ্যাঃ ব্রাহ্মণাঃ = পবিত্র/পুণ্যব্রত বা সুকৃতিশালী/সদাচারী ব্রাহ্মণগণ]

তুমি মদ্গতচিত্ত হও; আমার ভজনশীল ও পূজনশীল হও । কায়মনোবাক্যে আমাকে প্রণাম কর । এইরূপে মৎপরায়ণ হইয়া আমাতে মন ও বুদ্ধি সমাহিত করিলে আমাকেই লাভ করিবে । ৩৪

ভগবান্‌ ব্যাসকৃত লক্ষশ্লোকী শ্রীমহাভারতের ভীষ্মপর্বের অন্তর্গত শ্রীমদ্ভগবদ্গীতারূপ উপনিষদে ব্রহ্মবিদ্যাবিষয়ক যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে রাজবিদ্যারাজগুহ্যযোগনামক নবম অধ্যায় সমাপ্ত ।
_________________________________________


১) দোষদৃষ্টি = গুণে দোষাবিষ্কার

সদ্যোমুক্ত : অষ্টম অধ্যায়ে সুষুম্না-নাড়ীদ্বারে সগুণ ব্রহ্মের ধ্যান এবং তাহার ফল (ক্রমমুক্তি) বলা হইয়াছে । এখানে সম্যক্‌ জ্ঞান দ্বারা সদ্যোমুক্তি = সাক্ষান্মোক্ষ বলিতেছেন । মূলের 'তু' শব্দ দ্বারা ধ্যান হইতে জ্ঞানের এই বৈলক্ষণ্য সূচিত হইতেছে । জপধ্যান করিলে সুষুম্নাদ্বার খুলিয়া যায় বা সুষুম্না-নাড়ীতে প্রাণবায়ু প্রবেশ করে ।

২) পবিত্র, ধর্মসঙ্গত ব্রহ্মবিদ্যা :  পরাবিদ্যা বা ব্রহ্মবিদ্যা দ্বারা অক্ষর ব্রহ্ম অধিগত হন । - [মুণ্ডক উপনিষদ, ১|১|৫] । ইহার দ্বারা অনেক জন্মসঞ্চিত, ধর্মাধর্মাদি সমূলকর্ম ক্ষণমাত্রে ধ্বংস হয় । ইহা অনেক জন্মে পুণ্যসাধ্য বলিয়া অধর্মসংশ্লিষ্ট নহে ।
 
৯) আমার মতো কর্তৃত্বাভিমানহীন ও ফলাসক্তিশূন্য হইলে অন্যেও কর্মদ্বারা আবদ্ধ হন না ।

১০) যিনি এই বিশ্বপ্রপঞ্চের অধ্যক্ষ, তিনি পরমাকাশে বিরাজমান ।

সৃষ্টিরহস্য অনির্বচনীয় । পরমার্থতঃ সৃষ্টি, স্থিতি বা প্রলয় মিথ্যা । এই সৃষ্টিতত্ত্ব পরমার্থরূপে কে বুঝে ? কেই বা সংসারে সৃষ্টিতত্ত্ব উপদেশ করিল ? এই জগৎ কোথা হইতে আসিল ? কেনই বা ইহার সৃষ্টি হইল ?

১৪) কীর্তন = ভগবানের গুণগান, বেদান্তাদিশ্রবণ ও পূজা-জপ ইত্যাদি
  
১৫) ভক্তগণ বহুবিধ উপাসনা করিলেও একই ভগবানের উপাসনা করা হয় । কারণ, ভগবান্‌ সর্বাত্মক ।

২১) ভোগ দ্বারা পাপের ফল দুঃখ ও পুণ্যের ফল সুখ ক্ষয় হয় ।

২২) সাধারণতঃ সাধকগণ স্ব স্ব যোগক্ষেমের জন্য নিজেরাই চেষ্টা করেন; কিন্তু সর্বত্যাগীগণ ভগবান্‌ ভিন্ন অন্য কিছুই দেখিতে পান না । এইজন্য ভগবান্‌ স্বয়ং তাঁহাদের যোগক্ষেম বহন করেন । এই সকল পরমার্থদর্শী যোগ বা ক্ষেম, জীবন বা মরণ কিছুই আকাঙ্ক্ষা করেন না ।

যোগক্ষেম = মুক্তি [শ্রীধরস্বামী], শ্রেয় [কঠোপনিষদ, ১|২|২], নির্বাণ [বৌদ্ধশাস্ত্র] । 
'সেইসকল সতত চেষ্টাশীল এবং নিত্য দৃঢ়পরাক্রম ধ্যানিগণ পরম শান্তিরূপ নির্বাণ লাভ করেন ।' - [ধম্মপদ, অপ্পমাদো বগ্‌গো, ৩]
বৌদ্ধ নির্বাণ ও বৈদিক মুক্তি একার্থবাচক । মুক্তিই মুমুক্ষুর একমাত্র কাম্য ও প্রয়োজনীয় ।

২৩) ভগবান্‌ই যে অন্যান্য দেবতার মূর্তি ধারণ করিয়াছেন, তাহা অন্য দেবতার উপাসকগণ জানেন না । এই জন্য অন্যান্য দেবতার উপাসনাও অজ্ঞানপূর্বক পরমেশ্বরেরই উপাসনা ।

২৪) কারণ আমিই সকল যজ্ঞের ভোক্তা ও ফলদাতা ইহা না জানিয়া যজ্ঞাদি অনুষ্ঠান করায় যজ্ঞাদির ফল আমাতে অর্পিত হয় না । এইজন্য কর্মফলবশে তাঁহারা সংসারে ফিরিয়া আসেন । অন্য দেবতার উপাসকগণের কর্মফল অবশ্যম্ভাবী । 
 
২৫) কৃষ্ণপ্রণামী ন পুনর্ভবায় = কৃষ্ণপ্রণামী ব্যক্তির পুনর্জন্ম হয় না । - [নারদপুরাণ]

২৯) তাঁহারা মদাকারে আকারিত চিত্তবৃত্তিবিশিষ্ট হইয়া আমার অনুগ্রহভাজন হন এবং আমিও তাঁহাদের হৃদয়ে আবির্ভূত হইয়া তাঁহাদের অনুগ্রাহক হই ।
 
৩০) সাধু = সম্যগ্‌ বৃত্ত, ভগবদ্‌ভক্ত, সৎসংকল্প
 
৩১) তুমি যাহাকে রক্ষা কর কেহ তাহাকে বিনাশ বা পরাভব করিতে পারে না । পাপ দূর বা নিকট হইতে তাহাকে স্পর্শ করিতে পারে না । - [ঋগ্বেদ, ৩|৫৯|২]

৩২) স্ত্রী ও শূদ্র বেদাধ্যয়নবিহীন; বৈশ্য কেবল কৃষ্যাদিরত । - [শ্রীধরস্বামী] 

জাতি, কুল, লিঙ্গ নির্বিশেষে গীতার বাণী সকলের জন্য মুক্ত । যে সামাজিক প্রথার জন্য স্ত্রীলোক ও শূদ্রেরা বেদাধ্যায়নের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল, এই শ্লোককে তার সমর্থক বলে ধরা ঠিক নয় । গীতা রচনার সময় যে প্রথা প্রচলিত ছিল এখানে তার উল্লেখমাত্র করা হয়েছে । গীতা এই সব সামাজিক বিধিকে অনুমোদন করে না । গীতা যে আধ্যাত্মিক আদর্শের উপর জোর দিয়েছে তাতেই সে জাতিবৈষম্যকে অতিক্রম করেছে । - [ডাঃ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণন]

"আমার নিকটে নাহি জাতি কুল মান । স্ত্রী, পুরুষ, বৈশ্য, শূদ্র সকলে সমান ।।
শরণ যে লয় মোর ভক্তি সহকারে । আমি পার্থ ! পরাগতি বিতরি তাহারে ।।
নাহি থাক্‌ অধিকার শাস্ত্র অধ্যয়নে । হক্‌ জাতি-দোষে দুষ্ট সমাজ-নয়নে ।।
ম্লেচ্ছ বলি বিশ্ববাসী ঘৃণা যারে করে । ভক্ত হলে আমি তারে রাখি বক্ষোপরে ।।" - [শ্রী কালিধন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবানুবাদ]

*৩৩) গীতাশাস্ত্রী জগদীশচন্দ্র ঘোষ এই শ্লোকটির ভিন্ন অনুবাদ করিয়াছেন :-
পুণ্যাঃ ব্রাহ্মণাঃ (পবিত্র ব্রাহ্মণগণ) তথা (এবং) ভক্তাঃ রাজর্ষয়ঃ (ভক্ত রাজর্ষিগণ) পরম গতি লাভ করিবেন তাহার আর কথা কি ?

পণ্ডিত পঞ্চানন ভট্টাচার্যের অনুবাদ :-
সুকৃতিশালী ব্রাহ্মণগণ ও ভক্ত রাজর্ষিগণ যে পরমগতি লাভ করিবেন, ইহাতে আর কথা কি ?

পুণ্যাঃ ব্রাহ্মণাঃ = "পুণ্যব্রত ব্রাহ্মণ" - [ডাঃ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণন]; "সদাচার বিপ্র" - [শ্রী কালিধন বন্দ্যোপাধ্যায়]

এখানে উল্লেখযোগ্য "পবিত্র বা পুণ্যব্রত বা সুকৃতিশালী বা সদাচারী ব্রাহ্মণ" বলিতে গুণগত ব্রাহ্মণই বোঝায় কিন্তু স্বামী জগদীশ্বরানন্দের অনুবাদে "পুণ্যজন্মা ব্রাহ্মণ" বলিতে জাতিগত ব্রাহ্মণ বুঝাইতেছে । গীতায় গুণানুসারে বর্ণভেদ আছে, জন্মগত জাতিভেদ তো নাই । অতএব শ্রী জগদীশচন্দ্র প্রদত্ত অনুবাদটিই অধিকতর সমীচীন মনে হয় ।
_________________________________________

*Hard Copy Source:
"Srimadbhagabadgeeta" translated by Swami Jagadeeshwarananda, edited by Swami Jagadananda. 27th Reprint - January, 1997 (1st Edition - 1941), © President, Sriramkrishna Math, Belur. Published by Swami Satyabrotananda, Udbodhan Office, 1 Udbodhan Lane, Bagbazar, Kolkata-700003. Printed by Rama Art Press, 6/30 Dum Dum Road, Kolkata-700030.

Hard Copy References:
1)"Srimadvagabadgeeta" (28th Edition, 1928) compiled by Pandit Panchanan Bhattacharya, published by Sri Bodhisatya Bhattacharya from Aryya Mission Institution, Kolkata, Printed by Sri Bishnucharan Seth, Seth & Co., Printing House, 82, Balaram Dey Street, Kolkata.

2)"Srimadvagabadgeeta" (1st Edition, 1913) compiled & translated by Sri Kalidhan Bandyopadhyay, published by Sri Kalidas Mitra, 153# Amherst Street, Kolkata. Printed by K.D.Mitter & Co. at the Herald Printing Works, 153# Amherst Street.
 

3)"Srimadvagabadgeeta" by Dr. Sarvepalli Radhakrishnan, First Edition, 1971. Published by Mitra & Ghosh, 10 Shyamacharan Dey Street, Kolkata-12.
 

Sanskrit Source
English Translation

Disclaimer: This site is not officially related to Ramakrishna Mission & Math. এটি এক অর্বাচীন ভক্তের প্রয়াস মাত্র 
[Digitised by scanning (if required) and then by typing mostly in Notepad using Unicode Bengali "Siyam Rupali" font and Avro Phonetic Keyboard for transliteration. Uploaded by rk 

No comments:

Post a Comment