শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার তৃতীয় অধ্যায়ের মাহাত্ম্য
(শ্রীতারাকান্ত দেবশর্মা)*
শ্রীভগবান্ কহিলেন -
জনস্থানে কৌশিক-বংশে জড় নামে এক ব্রাহ্মণ ছিলেন । তিনি স্বীয় জাত্যুচিত ধর্ম পরিত্যাগপূর্বক বাণিজ্যব্যাপারে মনোনিবেশ করেন । ১
তিনি ব্যসনী, পরদারাসক্ত, অক্ষক্রীড়ানিরত মদ্যপায়ী এবং নিত্য মৃগয়ারসিক হইয়া কালাতিপাত করিতেছিলেন । ২
যখন তাঁহার বিত্ত ক্ষয় হইয়া গেল, তখন তিনি রাত্রিযোগে চৌর্য্য আরম্ভ করিলেন । তিনি চুরি করিয়া যজ্ঞানুষ্ঠানার্থী যজ্বাদিগের ধন আনয়ন পূর্বক পুনরায় বাণিজ্যার্থ উত্তর দিকে প্রস্থান করিলেন । ৩-৪
কস্তুরী, কৃষ্ণাগুরু এবং চন্দ্রিকোজ্জ্বল বহু চামর এই সকল বাণিজ্যদ্রব্য তিনি পাঁচ ছয় ক্রোশ দূর হইতে গৃহে লইয়া আসিলেন । অপর একদিন তাঁহার প্রেয়সীকে দেখিবার বাসনা হইল । ৪-৫
তিনি দূর পথ অতিক্রম করিয়া চলিলেন । এই সময় রবি অস্তগত হইলেন । অন্ধকারে ক্রমশঃ দশদিক্ আবৃত হইল । ৬
জড় ব্রাহ্মণ এক তরুতলে দস্যুদল কর্তৃক আক্রান্ত ও নিহত হইলেন । তাঁহার ধর্ম লুপ্ত হইয়াছিল, তাই তিনি এক ঘোর উগ্রতর গ্রহ হইয়া জন্মগ্রহণ করিলেন । ৭
এই অবস্থায় জড় ব্রাহ্মণ পিপাসিত, ক্ষুধার্ত, বারংবার সৃক্কণীলেহনকারী, ঊর্দ্ধকেশ, বিশালজঙ্ঘ, পৃষ্ঠলগ্নোদর, অস্থিমাত্রদেহ এবং বারংবার ঘূর্ণিতনেত্র হইয়া অবস্থান করিতে লাগিলেন । ৮-৯
ইত্যবসরে তদীয় বেদবিদ্বান্ ধর্মাত্মা পুত্র পিতার আগমনার্থ বহু দিন অপেক্ষা করিয়া পরে তাহার অনুসন্ধানে বহির্গত হইলেন । তিনি নিয়ত অনুসন্ধান করিতে লাগিলেন; পথিকদিগের নিকট পিতার কোনই সংবাদ পাইলেন না । ৯-১০
(একদিন এক পিতার পরিচিত ব্যক্তির নিকট পিতার সকল বৃত্তান্ত জানিতে পারিয়া পিতার পারলৌকিক কর্ম করিবার জন্য) তিনি দ্রব্যসম্ভার লইয়া বারাণসী অভিমুখে যাত্রা করিলেন । ১১-১২
পথে সাত আট স্থানে বিশ্রাম করিয়া পরে যে তরুমূলে তাঁহার পিতার মৃত্যু হইয়াছিল সেই স্থানে উপনীত হইয়া সন্ধ্যাবন্দনা করিতে লাগিলেন । ১৩
সন্ধ্যাপাসনার পর গীতার তৃতীয় অধ্যায় পাঠ করিলেন । তখন আকাশে এক ঘোর ধ্বনি উত্থিত হইল । ১৪
পুত্র দেখিলেন, ঘোররূপী পিতা আকাশ হইতে পতিত হইতেছেন । তদ্দর্শনে ভয়ে-বিস্ময়ে ব্যাকুলচিত্ত হইলেন । ১৫
সম্মুখে শূন্যমার্গে এক দিব্য বিমান আসিতে দেখিলেন যা প্রভূত তেজোব্যপ্ত, কোটি কোটি কিঙ্কিণী-পরিব্যাপ্ত এবং উহার তেজে দিঙ্মণ্ডল উদ্ভাসিত । ১৬-১৭
ঐ বিমানে পীত বসন পরিহিত তাঁহার পিতাকে দিব্য নারীগণ ঘিরিয়া রহিয়াছে এবং মুনিগণ তাঁহার স্তব করিতেছেন । ১৭-১৮
এবস্তুত পিতাকে দর্শন করিয়া পুত্র প্রণত হইলেন । পিতা তাহাকে আশীর্বাদ করিলেন । পুত্র তাঁহাকে সর্ব বৃত্তান্ত জিজ্ঞাসা করিলে, তিনি তাহাকে বলিলেন, - বৎস ! দুস্ত্যজ কর্মবশতঃ আমার যে দেহ হইয়াছিল, তুমি এখানে গীতাধ্যায় পাঠ করায় পুণ্যহেতু সে দেহ হইতে আমি মোচিত হইলাম । ১৮-১৯
অতএব জপকার্য্য হইতে তুমি বিরত হও । যে নিমিত্ত বারাণসীতে সম্প্রতি তুমি উপস্থিত হইতেছিলে, তাহা তোমার অনুষ্ঠিত হইয়াছে । ২০
শ্রীভগবান্ কহিলেন -
দীপ্ততেজা পিতা এই কথা কহিলে - ২১
পুত্র কহিলেন -
আমাকে আপনি হিতোপদেশ করুন, আমি আর কি করিব ? তাহা বলুন । ২২
শ্রীভগবান্ কহিলেন -
অনন্তর পিতা পুত্রকে বলিলেন, - হে অনঘ ! তুমি এই এক কার্য্য কর । আমি যে যে অপকর্ম করিয়াছি, আমার ভ্রাতাও তাহাই করিয়া ঘোর নরকে নিমগ্ন হইয়াছে । অতএব তুমি তাহাকেও মোচন কর । ২৩
ইহা ভিন্ন আমার বংশের অন্য যাহারা ভবিষ্যতে নিরয়গামী হইবে, তাহাদিগকেও তুমি মোচন করিবে । ইহাই আমার মনোরথ । ২৪
পিতা এই কথা কহিলে, পুত্র পুনরায় কৃতাঞ্জলি হইয়া কহিলেন, - আমি কোন্ কর্মানুষ্ঠানে তাঁহাদের সকলকে মোচন করিব বলুন । পুত্র এইরূপ নিবেদন করিলে, পিতা উত্তর করিলেন, - ২৫
পিতা কহিলেন -
বৎস ! আমি যাহাতে মোচিত হইয়াছি, তাহারই অনুষ্ঠান কর । ২৬
সেই অনুষ্ঠানে যে পুণ্য উৎপন্ন হইবে, তাহা তাঁহাদিগকে প্রদান কর । এইরূপ করিলেই আমার ন্যায় তাঁহারাও সকলে সর্বযাতনামুক্ত হইয়া অচিরে বিষ্ণুর সেই পরম পদ প্রাপ্ত হইবেন । ২৭-২৮
পুত্র কহিলেন -
পুত্র পিতা কর্তৃক এইরূপ আদিষ্ট হইয়া কহিলেন, - হে তাত ! তাঁহাদের মোচনের উপায় যদি এইরূপই হয়, তাহা হইলে, আপনার অভিপ্রায় অনুসারে আমি সেই নারকীয়দিগকে মোচন করিব । ২৮-২৯
পুত্রের কথাবসানে পিতা কহিলেন, - 'এবমস্তু' তোমাত মঙ্গল হউক, আজ আমার মহাপ্রিয় কার্য্য সম্পন্ন হইল । পিতা পুত্রকে এইরূপ উপদেশ দিয়া বিষ্ণুর পরম পদে প্রয়াণ করিলেন । ২৯-৩০
পুত্রও সেই স্থান হইতে প্রত্যাবৃত্ত হইয়া জনস্থানে আগমনপূর্বক এক নিকটবর্তী সুন্দর হরি-মন্দিরে কালাতিপাত করিতে লাগিলেন । ৩০-৩১
তিনি পিতার কথানুযায়ী জপাদি কার্য্য সমাধা করিয়া নারকীদিগকে মোচন করিবার জন্য কৃত পুণ্য অর্পণ করিলেন । ৩১-৩২
ইতিমধ্যে বিষ্ণুকিঙ্করগণ যাতনাগ্রস্ত নারকীদিগকে মোচন করিবার জন্য যমের নিকট উপস্থিত হইলেন । ৩২-৩৩
যম নানা সৎক্রিয়া দ্বারা তাঁহাদিগকে অর্চনা করিয়া কুশল জিজ্ঞাসা করিলেন । বিষ্ণুকিঙ্করগণ তাঁহাদের সর্বাঙ্গীণ কুশলবার্তা বলিলেন । পিতৃলোক-মহেশ্বর যম এইরূপে বিষ্ণুকিঙ্করগণের সৎকার করিয়া তাঁহাদের আগমনকারণ জিজ্ঞাসা করিলেন । ৩৩-৩৫
বিষ্ণুকিঙ্করগণ তদুত্তরে বলিলেন -
হে কীনাশপতে ! অবগত হউন, শেষপর্য্যঙ্কশায়ী হরি আমাদিগকে আপনার নিকট প্রেরণ করিয়াছেন । তিনি আমাদের মুখে আপনার কুশলবার্তা জিজ্ঞাসা করিয়াছেন এবং নারকীয় প্রাণীদিগকে মোচন করিবার আদেশ দিয়াছেন । ৩৫-৩৭
অমিততেজ বিষ্ণুর এই আদেশ শ্রবণান্তে যম অবনতমস্তকে তাহা মান্য করিয়া মনে মনে কিঞ্চিৎ চিন্তা করিলেন এবং সেই ক্ষণেই দেখিলেন, সমস্ত মদোদ্ধত প্রাণীই নরক হইতে নির্মুক্ত হইয়াছে । ৩৭-৩৮
তদ্দর্শনে যম সেই সকল প্রাণী কর্তৃক অনুগত হইয়া নিজেও শ্রেষ্ঠ যানারোহণে বিষ্ণুর আয়তনে ক্ষীরসাগরতীরে প্রয়াণ করিলেন । ৩৯
সেখানে গিয়া দেখিলেন, তদভ্যন্তরে উদ্যত অনেক কোটি সূর্য্যসমপ্রভ, ইন্দীবরদলশ্যাম জগদ্গুরু অবস্থান করিতেছেন । ৪০
তাঁহার শয্যাস্বরূপ শেষ ফণীর ফণারত্ন মরীচি দ্বারা তদীয় তেজ মিশ্রিত হইয়াছে । তিনি আনন্দ-নির্ভর, প্রীতচিত্ত, ভাবানুগত দৃষ্টিশ্রেণী দ্বারা লক্ষ্মী কর্তৃক পুনঃপুনঃ প্রেমভরে নিরীক্ষিত, ধ্যাননিষ্পন্দনেত্র যোগিগণ কর্তৃক সর্বদিকে পরিবেষ্টিত, এবং শত্রুবর্গের পরাজয়ের জন্য মহেন্দ্র কর্তৃক স্তুত । ৪১-৪৩
ব্রহ্মার মুখনিঃসৃত মূর্তিমতী বচনরাজি দ্বারা বেদান্তশাস্ত্রে তাঁহার গুণরাশি গীত হইতেছে । তিনি সম্প্রীত, সর্বযোনিতেই অনাসক্ত, যোগসঞ্চিত পুণ্যরাশি দ্বারা সর্বজন্তুতেই তিনি যুগপৎ অখিলাত্মরূপে পরিদৃশ্যমান । ৪৩-৪৫
দীপ্তিপূরিত আলোকরাশি দ্বারা আত্মাকে তিনি আমোদিত করিতেছেন । তিনি কৌমুদী-দ্যোতিত নভস্তলবৎ ভুজগরাজের প্রভায় প্রভাসিত - ইন্দীবর-দলশ্যাম বিরাট বপু ধারণ করিতেছেন । যম তাঁহাকে দেখিয়া আনতমস্তকে বিশিষ্ট বিজ্ঞতার সহিত স্তব করিতে লাগিলেন । ৪৬-৪৭
যম কহিলেন -
যিনি সমস্ত নির্মান করিয়াও নির্মলী-ভূতচেতা, যাঁহার বদন হইতে বেদসমূহ নির্গত হইয়াছে, সেই বিশ্বরূপী বিধাতাকে আমি নমস্কার করি । ৪৮
বল-বেগ-সুদুর্ধর্ষ দানবেন্দ্রগণের দর্প যিনি চূর্ণ করিয়াছেন, যিনি স্থিতি-ব্যাপারে সত্ত্বগুণাবলম্বী, সেই বিশ্বাধার বিষ্ণুকে আমার নমস্কার । ৪৯
যিনি অখিল দেহীর দুরিতরাশি দূরীভূত করেন, যাঁহার উন্মীলিত ললাটনেত্র হইতে অগ্নিচ্ছটা নির্গত হইয়াছিল, সেই মহেশরূপী বিষ্ণুকে আমি নমস্কার করি । ৫০
হে দেব ! তুমি সর্বলোকের গুরু আত্মা মহেশ্বর । তাই সমস্ত বৈষ্ণবকে মোচন করিয়া দয়া প্রকাশ করিতেছেন । ৫১
এই সমগ্র সংসার আপনি মায়াজালে ঘিরিয়া রাখিয়াছেন । মায়া দ্বারাই ইহা উপচিত হইতেছে; কিন্তু আপনি নিজে মায়া বা মায়াজনিত গুণ দ্বারা অভিভূত নহেন । ৫২
আপনি মায়া এবং গুণাভ্যন্তরে অবস্থিত হইলেও তাহাদের কোন একটীই আপনার উপর প্রভাব বিস্তার করিতে পারে না । আপনি বিষয়বর্তিনী দৃষ্টি দ্বারা, - ৫৩
(কোনরূপ ফল ভোগ না করিয়া) আত্মাতেই অভিলীন হইয়া থাকেন । আপনার মহিমার অন্ত নাই, ইহা নিরবধি - নিঃসীম । ৫৪
কিরূপেই বা আপনি বাক্যের বিষয়ীভূত হইবেন ? অতএব এক্ষেত্রে আমার মৌনাবলম্বনই উপযুক্ত । যম এইরপ স্তব করিয়া পরে যুক্তকরে এই কথা কহিলেন, - ৫৫
"আমি আপনার আদেশে এই সকল অকৃতপুণ্য প্রাণীকেও মোচন করিয়া দিয়াছি । হে জগদ্গুরু ! আপনার আর যদি কোন কার্য্য থাকে আদেশ করুন ।" ৫৬
যম এইরূপ বিজ্ঞাপন করিলে, মধুসূদন তাঁহাকে মেঘগম্ভীর-বাক্যে যেন সুধারসে সিঞ্চন করিয়াই কহিলেন, - ৫৭
"আমি সময়ানুবর্তী হইয়া পাপ হইতে লোকের উদ্ধার সাধন করি । পরন্তু তোমাতে ভারার্পণ করিয়া আমি দেহিগণের জন্য শোক করি না । অতএব নিজালয়ে গমন কর, এবং স্বীয় কর্তব্য কর্ম করিতে থাক ।" ৫৮
শ্রীভগবান্ কহিলেন -
যমকে এই কথা কহিয়া দেবেশ অন্তর্ধান করিলেন । যমও স্বীয় পুরে আসিলেন । ৫৯
সেই বিপ্র এইরূপে স্বজাতীয় বহু ব্যক্তিকে নরক হইতে উদ্ধার করিয়া উত্তম যানারোহণে স্বয়ং বিষ্ণুলোকে প্রয়াণ করিলেন । ৬০
[পদ্মপুরাণ, উত্তর খণ্ড, ১৭৭ অধ্যায়]
_________________________________________
চলিত বাংলায় সারাংশ
জনস্থান শহরে জড় নামে কৌশিক বংশজাত এক ব্রাহ্মণ বাস করত । সে ব্রাহ্মণ ধর্মের পরিপন্থি মদ, জুয়া, পশু-শিকার ও গণিকালয়ে গমন করে ক্রমে তার সমস্ত ধন-সম্পদ নষ্ট করে ফেলল । তখন সে উত্তর দেশে বাণিজ্যযাত্রা করল । সেখানে ভাল ধনাগম করে জনস্থানে ফিরে আসার পথে এক জনশূন্য স্থানে পৌছানর পর সূর্যাস্ত হল । অন্ধকার রাতে এক গাছের তলায় বিশ্রাম করার সময় কয়েকজন দস্যু এসে তাকে মেরে তার অর্থকড়ি নিয়ে চলে গেল । মরার পর সে ভূত হল ।
জড়ের পুত্র খুবই ধার্মিক ছিল এবং বৈদিক শাস্ত্রে সে ছিল পারঙ্গম । অনেক দিন যাবার পরেও তার পিতা ফিরে না আসায় সে পিতার খোঁজে বের হল । বহুদিন পর তার পিতার পরিচিত এক ব্যক্তির কাছ থেকে পিতার মৃত্যু-সংবাদ পাওয়ার পর সে কাশীধামে গিয়ে পিণ্ডদানের মনস্থ করল । কাশী যাত্রার নবম দিনে ক্লান্ত হয়ে ঘটনাক্রমে যে গাছের নিচে তার পিতাকে হত্যা করা হয়েছিল সেই একই গাছের নিচে বিশ্রাম করতে বসল । সন্ধ্যাবেলায় সেখানে সে তার নিত্যপূজা সম্পন্ন করল এবং শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার তৃতীয় অধ্যায় আবৃত্তি করল ।
তার আবৃত্তি শেষ হওয়া মাত্রই আকাশ মার্গ থেকে এক উচ্চ নাদ ভেসে এল । ঊর্ধ্বদিকে তাকিয়ে সে তার পিতাকে দেখতে পেল । আর তার চোখের সামনেই চতুর্ভুজধারী পীতবসন পরিহিত এক অপরূপ সুন্দর মূর্তিতে তার পিতার রূপ পরিবর্তিত হয়ে গেল । তার মেঘবর্ণদেহ কান্তিতে চতুর্দিক আলোকিত হল । পিতা তাকে আশীর্বাদ করল । পুত্র এই সকল বিস্ময়কর ঘটনাবলীর অর্থ জিজ্ঞাসা করল । পিতা বলল, "প্রিয় পুত্র, তোমার শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার তৃতীয় অধ্যায় আবৃত্তির ফলে আমার পাপকর্মের ফলে প্রাপ্ত প্রেত শরীর থেকে আমি মুক্ত হয়েছি । তুমি যে উদ্দেশ্যে কাশী ভ্রমণ করতে বেরিয়েছ, তা সফল হয়েছে । একজন তুমি বাড়ি ফিরে যেতে পার ।"
আরও কোন নির্দেশ আছে কিনা জানতে চাওয়ায় পিতা বলল, "আমার ভাইও খুবই পাপী-জীবন যাপন করত বলে নরকের সর্বপেক্ষা কোন এক অন্ধকারাচ্ছন্ন অঞ্চলে পড়ে কষ্ট পাচ্ছে । তুমি যদি তাকে এবং অন্যান্য পূর্বপুরুষদের উদ্ধার করতে ইচ্ছা কর, যারা এই জড় বিশ্বে বিভিন্ন দেহ ধারণ করে কষত ভোগ করছে, তবে দয়া করে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার তৃতীয় অধ্যায়টি পাঠ কর । যারা এই অধ্যায়ের আবৃত্তি করে, তারা সকলেই ভগবান বিষ্ণুর সমতুল্য রূপ ধারণ করবে এবং তাদের বৈকুণ্ঠ প্রাপ্তি হবে ।"
পিতার নির্দেশবাক্য শুনে পুত্র উত্তর দিল, "তাই যদি হয়, তবে যারা এই নরকে আবদ্ধ হয়ে আছে তাদের সকলের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমি আবৃত্তি করতে থাকব ।" তার পিতা তখন তাকে আশীর্বাদ করে বলল, "তথাস্তু" । এরপর বৈকুণ্ঠলোক থেকে এক পুষ্পরথ এসে পিতাকে নিয়ে গেল ।
অতঃপর পুত্র জনস্থানে ফিরে এসে সকল বদ্ধ আত্মাকে নরক থেকে উদ্ধারের মানসে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার তৃতীয় অধ্যায় পাঠ করতে শুরু করল । তার এই আবৃত্তি পাঠ যখন দিনের পর দিন চলতে লাগল, তখন ভগবান বিষ্ণু পাপীদের শাস্তিবিধানের অধিকর্তা যমরাজের কাছে দূত পাঠালেন । যমরাজের সামনে বিষ্ণুদূত উপস্থিত হয়ে বলল যে, ক্ষীর সমুদ্রে অনন্ত-শয্যায় শায়িত ভগবান বিষ্ণু তার কুশল জানতে চেয়েছেন এবং নরকে কষ্ট পাওয়া সকল বদ্ধ আত্মাকে মুক্তি দিতে বলেছেন ।
ভগবান বিষ্ণুর নির্দেশ শোনামাত্রই যমরাজ সকল বদ্ধ আত্মাকে নরক থেকে মুক্তি দিলেন । এইভাবে জড়ের পুত্র ব্রাহ্মণ যখন তার সব পূর্বপুরুষদের এবং বাকি বদ্ধ-আত্মাকে সাফল্যের সঙ্গে নরক থেকে মুক্তি দেন, তখন বিষ্ণুদূতেরা সেখানে এসে তাকেও বিষ্ণুলোকে নিয়ে যান ।
_________________________________________
*Hard Copy Source:
"Padmapuran, Uttarkhanda (Bengali)" by Veda Vyas, translated by Sri Tarakanta Debasharrma, Krishnadas Shastri and Sriramdas Shastri, edited by Pandit Panchanan Tarkaratna. Bangabasi-Electro-machine edition, 1915. Published & printed by Sri Natabar Chakraborty for Bangabasi Karyalay, 38/2 Bhabanicharan Datta Street, Kolkata. First Nababharat Edition, 2013 (with identical page layout). Nababharat Publishers, 72 D, Mahatma Gandhi Road, Kolkata-700009. 1062p.
Hard Copy Reference:
"Srimadvagabadgeeta Mahatmya (Bengali)" compiled by Sri Sanatangopal Das Brahmachari. 6th Edition, 2014 (First Edition 2005). Printed & published by Bhaktivedanta Book Trust, Mayapur-741313, Nadia, West Bengal, India. © 2014 by Bhaktivedanta Book Trust.
Sanskrit Source
English Translation
No comments:
Post a Comment