Saturday, September 5, 2015

শ্রীশ্রীগীতামাহাত্ম্যম্‌ (Padmapuran-17)


শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার সপ্তদশ অধ্যায়ের মাহাত্ম্য

(শ্রীতারাকান্ত দেবশর্মা)*

মহাদেব কহিলেন
হে শিবে ! ষোড়শাধ্যায়সামর্থ্য কথিত হইল, সম্প্রতি মহিমাম্ভোনিধি সপ্তদশাধ্যায় স্পষ্ট করিয়া বলিতেছি, শ্রবণ কর । ১

দুঃশাসন নামে সেই খড়্গবাহু-ভূপতিতনয়ের এক ভৃত্য ছিল, সে সেই গজকে ধরিতে গিয়া গজ হইতেই যমালয় গমন করে । দুঃশাসনের বাসনা গজের প্রতি একান্ত অভিনিবিষ্ট হইয়াছিল, তাই সে গজযোনি প্রাপ্ত হইল । কিন্তু সেও গীতার সপ্তদশাধ্যায় শ্রবণ করিয়া পরমপদ প্রাপ্ত হইয়াছিল । ২-৩

পার্বতী বলিলেন
হে প্রভো ! দুঃশাসন গজত্ব প্রাপ্ত হইয়া মুক্ত হইয়াছিলেন, ইহা শুনিলাম; হে কল্যাণময় ! তাহাই বিস্তারপূর্বক বর্ণন করুন । ৪

মহাদেব কহিলেন
এই দুঃশাসন পূর্বে দুর্মেধা ছিল, এই ব্যক্তি বহুমূল্য পণে আবদ্ধ হইয়া রাজকুমারগণের সহিত সেই ক্ষিপ্তগজে আরোহণ করিয়াছিল । করিবর কতিপয় পদ গমন করিলে লোক সকল দুঃশাসনকে এ কার্য্যে নিষেধ করিয়াছিল, মূঢ় দুঃশাসন তাহা শুনিল না, সে করীর প্রতি কর্কশ বাক্য প্রয়োগ করিল । অনন্তর তাহার কর্কশ বাক্য শ্রবণে করীর পাদস্খলন হইল, সে ক্রোধে কম্পমান হইয়া দুঃশাসন ও কুমারগণের সহিত ভূতলে পড়িয়া গেল । অনন্তর কৃতান্তোপম নিরঙ্কুশ করী শুণ্ড দ্বারা পৃষ্ঠারূঢ় দুঃশাসনকে ভূপৃষ্ঠে পাতিত ও নিহত করিল । দুঃশাসন পতিত হইয়া শ্বাস পরিত্যাগ করিতে করিতে গতাসু হইলে, রোষপরবশ সেই মত্ত গজ তদীয় অস্থিসমূহ নিস্পেষিত করিয়া পৃথক্‌ পৃথক্‌ নিক্ষেপ করিল । ৫-৯

দুঃশাসন তৎকালে কালকবলিত হইয়া গজযোনি প্রাপ্ত হয় । এই গজজন্মে সে সিংহল দ্বীপের ভূপতিসন্নিধানে অনেকদিন অতিবাহিত করে । কিয়দ্দিন পরে সিংহল-মহীপালের খড়্গবাহু মহীপতির সহিত গরীয়সী মৈত্রী হয় । অনন্তর খড়্গবাহুর প্রতি প্রীতিবশতঃ জয়দেবনামক জনৈক মহীভুজ জলপথে ঐ হস্তিকে তাঁহার নিকট আনয়ন করেন । ঐ হস্তি খড়্গবাহু মহীপের গৃহে কিছুদিন অতিবাহিত করিল, সে নিজের জাতি ও সোদর বন্ধুবান্ধবগণকে স্মরণ করিয়া মহাদুঃখে তুষ্ণীম্ভাবে অবস্থান করিতে লাগিল; কিন্তু তাহার তুষ্ণীম্ভাবের কারণ কেহই বুঝিতে পারিল না । ১০-১৩

একদা খড়্গবাহু সমস্যাশ্লোকপূরণে সন্তুষ্ট হইয়া জনৈক কবিকে ঐ করী পুরস্কারস্বরূপ প্রদান করেন । কবিও করীর রোগাদি উপদ্রবে ভীত হইয়া শতমুদ্রা মূল্যে মালব দেশের মহীপালের নিকট উহাকে বিক্রয় করিয়া ফেলেন । মালবমহীপাল কিয়ৎকাল যত্নপূর্বক তাহাকে পালন করিলেন, কিছুদিন অতীত হইলে দুর্জ্জর জ্বরে কুঞ্জর মুমূর্ষু হইল ।  গজ শীতলজলের আঘ্রাণ লইত না, ঘাষমুষ্টি খাইত না এবং শয়ন করিয়াও সুখানুভব করিত না; সে কেবল অশ্রু বিসর্জন করিত । ১৪-১৭

অনন্তর মালবরাজ হস্তিপকথিত এই বৃত্তান্ত বিদিত হইয়া সেই জ্বরিত গজের সন্নিধানে আগমন করিলেন । হস্তী মহীপালকে অবলোকনপূর্বক বিগতজ্বর হইয়া জগদ্‌বিস্ময়কর বক্ষ্যমাণ বাক্য বলিতে লাগিল । ১৭-১৯

গজ বলিল
হে রাজন্‌ ! আপনি অশেষ শাস্ত্রজ্ঞ ও রাজনীতির সাগর; আপনা কর্তৃক শত্রুকুল নির্মূল হইয়াছে এবং আপনি মুরারির চরণপ্রিয় । কি ঔষধ, কি বৈদ্য, কি বিধান, কি জাপক - ইহা দ্বারা কোন ফল হইবে না; যিনি গীতার সপ্তদশাধ্যায় নিত্য পাঠ করেন, এইরূপ কোন দ্বিজকে আনয়ন করুন, তিনিই আমার রোগশান্তি করিতে পারিবেন, সংশয় নাই । ১৯-২১

অনন্তর নরপতি গজপ্রার্থিত কার্য্য করিলেন, তারপর গজ নিজযোনি পরিত্যাগপূর্বক দুঃশাসনরূপ প্রাপ্ত হইল । অতঃপর তাদৃশ দ্বিজাভিমন্ত্রিত উত্তম জল তাহার মস্তকে নিক্ষিপ্ত হইলে সে দিব্য বিমানে আরোহণ করিল । রাজা সেই দুঃশাসনকে ইন্দ্রের ন্যায় তেজঃপুঞ্জ অবলোকন করিলেন । ২২-২৪

রাজা বলিলেন
তোমার জাতি কি ? তোমার আত্মা কীদৃশ এবং তোমার বৃত্তিই বা জি ? এই সকল আমাকে বল । তুমি কি কর্ম করিয়া গজ হইয়াছ এবং কেমন করিয়া এখানে আসিলে ? ২৫

বিমুক্ত বিমানস্থ দুঃশাসন, রাজা কর্তৃক এইরূপ জিজ্ঞাসিত হইয়া স্থিরাক্ষরে নিজ বৃত্তান্ত নিবেদন করিল । অনন্তর মালব মহীপাল নরবর্মাও গীতার সপ্তদশাধ্যায় পাঠ করিয়া অত্যল্পকালে মোক্ষলাভ করিলেন । ২৬-২৭

[পদ্মপুরাণ, উত্তর খণ্ড, ১৯১ অধ্যায়]
_________________________________________

চলিত বাংলায় সারাংশ


রাজা খড়্গবাহুর পুত্রের দুঃশাসন নামে এক শঠ ও অতি মুর্খ ভৃত্যু ছিল । দুঃশাসন একদিন রাজার পোষা হাতির পিঠে চড়তে পারবে বলে রাজকুমারের সঙ্গে বাজি ধরল । লাফিয়ে হাতির পিঠে চড়ে কয়েক পা যাবার পর সবাই তাকে সেই ভয়ঙ্কর হাতিতে না চড়তে অনুরোধ করল । কিন্তু মূর্খ কারও কথা না শুনে অঙ্কুশের খোঁচা ও রূঢ়বাক্য বলে হাতিটিকে উত্তেজিত করে তুলল । এর ফলে হাতিটি উন্মত্ত হয়ে এদিক-ওদিক দৌড়তে লাগল আর হাতির পিঠ আঁকড়ে ধরে না থাকতে পেরে দুঃশাসন মাটিতে পড়ে গেল । হাতিটি তাকে পায়ের তলায় পিষে ফেলল । অতঃপর দুঃশাসন হাতি হয়ে জন্মে সিংহল দ্বীপের রাজপ্রাসাদে দিন কাটাতে লাগল ।

একদিন সিংহল দ্বীপের রাজা হাতিটিকে তার অন্তরঙ্গ বন্ধু খড়্গবাহুকে উপঢৌকন হিসাবে পাঠালেন । সেখানে হাতিটি তার পূর্বজন্মের বন্ধুবান্ধবদের কথা মনে করে মন মরা হয়ে পড়ল । খড়্গবাহু হাতিটিকে এক কবিকে তার কবিতা শুনে তুষ্ট হয়ে দান করলেন । হাতিটির মন মরা অবস্থা দেখে আশঙ্কিত হয়ে সেই কবি একশত স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে মল্বের রাজাকে বিক্রি করে দিলেন । 

কিছুকাল পর হাতিটি চরম রোগে আক্রান্ত হল । সে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিল, শুধু অশ্রু বিসর্জন করত । এই বৃত্তান্ত শুনে রাজা পীড়িত হাতিটির কাছে আসলে তাকে সেটি বলল, "হে রাজা ! আপনি খুবই ধার্মিক ও শাস্ত্রজ্ঞ এবং আপনি মূরারির চরণপ্রিয় । আমার এসময়ে কোন ওষুধ, বৈদ্য, যাগ-যজ্ঞতে কাজ হবে না । যিনি গীতার সপ্তদশ অধ্যায় নিত্য পাঠ করেন, এরকম কোন ব্রাহ্মণকে নিয়ে আসুন, একমাত্র তিনিই আমার রোগশান্তি করতে পারবেন ।"

হাতিটির অনুরোধ অনুযায়ী কাজ করতেই সে পূর্বেকার দুঃশাসনরূপ প্রাপ্ত হল । গীতার সপ্তদশ অধ্যায় পাঠ করতে করতে ব্রাহ্মণ তার মাথায় জল ছেটাতেই সে মুক্ত হয়ে ইন্দ্রের ন্যায় তেজদীপ্ত হয়ে বিমানে করে বৈকুণ্ঠে চলে গেল । যাওয়ার আগে সে রাজাকে তার পূর্বজন্মের সব কথা বলে দিয়েছিল । অতঃপর রাজাও নিয়মিত গীতার সপ্তদশ অধ্যায় পাঠে নিয়োজিত হলেন এবং অচিরেই মোক্ষলাভ করলেন ।
_________________________________________
*Hard Copy Source:
"Padmapuran, Uttarkhanda (Bengali)" by Veda Vyas, translated by Sri Tarakanta Debasharrma, Krishnadas Shastri and Sriramdas Shastri, edited by Pandit Panchanan Tarkaratna. Bangabasi-Electro-machine edition, 1915. Published & printed by Sri Natabar Chakraborty for Bangabasi Karyalay, 38/2 Bhabanicharan Datta Street, Kolkata. First Nababharat Edition, 2013 (with identical page layout). Nababharat Publishers, 72 D, Mahatma Gandhi Road, Kolkata-700009. 1062p.

Hard Copy Reference:
"Srimadvagabadgeeta Mahatmya (Bengali)compiled by Sri Sanatangopal Das Brahmachari. 6th Edition, 2014 (First Edition 2005)Printed & published by Bhaktivedanta Book Trust, Mayapur-741313, Nadia, West Bengal, India. © 2014 by Bhaktivedanta Book Trust.

Sanskrit Source
English Translation

[Digitised by scanning (if required) and then by typing mostly in Notepad using Unicode Bengali "Siyam Rupali" font and Avro Phonetic Keyboard for transliteration. Uploaded by rk
 
<Previous--Contents--Next>

No comments:

Post a Comment