Thursday, August 13, 2015

শ্রীশ্রীগীতামাহাত্ম্যম্‌ (Padmapuran-8)


শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার অষ্টম অধ্যায়ের মাহাত্ম্য

(শ্রীতারাকান্ত দেবশর্মা)*

মহাদেব বলিলেন
হে পার্বতি ! অষ্টমাধ্যামাহাত্ম্য বলিতেছি, শ্রবণ কর; ইহা শ্রবণ মাত্রেই তুমি মহামোদ প্রাপ্ত হইবে । ১

দক্ষিণাপথে আমর্দক নামক এক বিখ্যাত পুর বিদ্যমান । তথায় ভাবশর্মা নামে জনৈক দ্বিজ বাস করিত । বেশ্যাপতি দ্বিজ ভাবশর্মা মাংসভোজন, মদ্যপান ও সাধুদিগের সম্পদ্‌ অপহরণ করিয়া পরনারীর সহিত রমণ করিত । ২-৩

মৃগয়াকূতুহলী উগ্রস্বভাব ভাবশর্মা এই ভাবে তাহার উৎকট মনোরথ পূরণ করিতে থাকিলে সে একদা বিটসভায় সুহৃদ্‌গণের সহিত আকণ্ঠ তালমদ্য পান করিয়া অজীর্ণ রোগে আক্রান্ত হইল । পাপাত্মা ভাবশর্মা কিয়দ্দিবস পরে পঞ্চত্ব প্রাপ্ত হইয়া এক মহাতালতরুরূপে জন্ম গ্রহণ করিল । ৪-৫

কালক্রমে কোনও এক দ্বিজদম্পতি ব্রহ্মরাক্ষসত্ব প্রাপ্ত হইয়া ঐ তাল তরুর নিবিড় ও অতি শীতল ছায়া আশ্রয় করিয়াছিল । ৬

দেবী বলিলেন
হে দেব ! তাহাদের জাতি কি ? স্বভাব কিরূপ ? বৃত্তি কীদৃশ ? এবং কি কর্ম করিয়া তাহারা ব্রহ্মরাক্ষস হইল ? তাহা কীর্তন করুন । ৭

মহাদেব বলিলেন
বেদবেদাঙ্গতত্ত্বজ্ঞ সর্বশাস্ত্রবিৎ সদাচাররত কুশীলব নামে এক দ্বিজ ছিলেন; তাঁহার পত্নীর নাম কুমতি, কুমতি কদাশয়া ছিল । কুশীলব লোভবশে ভার্য্যার সহিত মহাদান গ্রহণ করিতেন; মহিষী, কালপুরুষ ও অশ্বাদি মূল্যবান মহাদান প্রতিদিন গ্রহণ করিলেও অন্য ব্রাহ্মণকে এক কপর্দকও দান করিত না । ৮-১০

কালবশে ঐ দ্বিজদম্পতি পঞ্চত্ব প্রাপ্ত হইয়া ব্রহ্মরাক্ষসত্ব প্রাপ্ত হয় এবং তাহারা পৃথিবী পর্য্যটন করিতে করিতে একদা ক্ষুধাতৃষ্ণায় অবসন্নদেহ হইয়া তালতরুর ছায়াতলে আগমনপূর্বক বিশ্রাম করে । ১১-১২

সেই সময় তাহার পত্নী জিজ্ঞাসা করিল
কিরূপে আমাদের এই মহাদুঃখ দূর হইবে ? কি করিয়াই বা আমরা ব্রহ্মরাক্ষসযোনি হইতে মুক্ত হইব ? ১২

জায়া কর্তৃক জিজ্ঞাসিত হইয়া দ্বিজ উত্তর করিলেন
ব্রহ্মবিদ্যোপদেশ, অধ্যাত্মবিচারণা ও ক্রিয়াবিধিজ্ঞান ব্যতীত ব্যতীত কিরূপে এ সঙ্কট হইতে পরিত্রাণ হইতে পারে ? ১৩-১৪

ভার্য্যা জিজ্ঞাসিল
"কিং তদ্‌ব্রহ্ম কিমধ্যাত্মং কর্ম পুরুষোত্তম ।" হে পুরুষপ্রবর ! সেই ব্রহ্ম কি ? অধ্যাত্ম কি ? এবং কর্ম কাহাকে কহে ? ১৫

মহাদেব বলিলেন
হে দেবী ! দ্বিজভার্য্যা এই পর্য্যন্ত বলিলে যে আশ্চর্য্য ব্যাপার সংঘটিত হইয়াছিল, তাহা শ্রবণ কর । ১৫

পূর্বে যে "কিন্তদ্‌ব্রহ্ম" ইত্যাদি বলিয়াছি, উহা গীতার অষ্টমাধ্যায়ের প্রথম শ্লোকার্ধ, তৎকালে এই শ্লোকার্ধ শ্রবণমাত্র ভাবশর্মা তালতরু রূপ পরিহার করিয়া উত্তম দ্বিজরূপ প্রাপ্ত হইলেন । তাঁহার আত্মা জ্ঞানদ্বারা বিধৌত হওয়ায় তিনি তৎক্ষণাৎ পাপকঞ্চুক হইতে মুক্তি লাভ করিলেন । ১৬-১৭

আর যে দম্পতির মুখ হইতে দৈবাৎ ঐ শ্লোকার্ধ নির্গত হইয়াছিল, তারাও শ্লোকমাহাত্ম্যে মুক্ত হইলেন । ১৭-১৮

অনন্তর অন্তরীক্ষ হইতে দিব্যাঙ্গরাগণের বদনচন্দ্রমণ্ডলে মণ্ডিত এক দিব্য বিমান আগমন করিল । ঐ বিমানস্থ কিঙ্কিণীর ক্বণধ্বনি উত্থিত হইতে লাগিল; ঐ বিমানস্থ অপ্সরাগণের বদনপদ্মোপরি ভ্রমরগণ ভ্রমণ করিতেছিল, মথ্যমান ক্ষীরনিধির বেলাসংলগ্ন ফেনপিণ্ডবৎ পাণ্ডুরাভ এবং গঙ্গাতরঙ্গবৎ সুন্দর শ্বেতচামরনিচয় দ্বারা ঐ বিমান উপশোভিত হইয়াছিল । ঐ বিমানে গন্ধর্বগণ গান ও শত শত সুরবধু নৃত্য করিতেছিল । দ্বিজদম্পতি এবংবিধ দিব্য বিমান আরূঢ় হইয়া অমরপুরে প্রস্থান করিলেন । ১৮-২১

হে দেবী ! এ স্থানের এই সকল বৃত্তান্ত অত্যন্ত বিস্ময়কর । ২২

অতঃপর মেধাবী ভাবশর্মা সাদরে সেই শ্লোকার্ধ দেবদেব জনার্দনের আরাধনামানসে লিখিয়া লইয়া মুক্তিদায়িনী বারাণসী নাম্নী নগরীতে গমন করিলেন । উদারবুদ্ধি ভাবশর্মা তথায় পরম তপস্যায় প্রবৃত্ত হইলেন । ২২-২৩

এদিকে বৈকুণ্ঠনাথ জনার্দন জগন্নাথ নিদ্রা পরিত্যাগপূর্বক উত্থিত হইলেন, তখন জলধিনন্দিনী লক্ষী কৃতাঞ্জলি হইয়া তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, - নিদ্রা ত্যাগ করিয়া উঠিয়া বসিলেন কেন ? ২৪-২৫

শ্রীভগবান বলিলেন
আমার প্রতি ভক্তিরসপূর্ণ মেধাবী জিতেন্দ্রিয় দ্বিজ ভাবশর্মা কাশীর ভাগীরথীতীরে গীতার অষ্টমাধ্যায়ের শ্লোকার্ধ জপ করিয়া সাতিশয় তপস্যা করিতেছে, হে দেবী ! তদীয় তপস্যায় আমি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হইয়াছি, হে প্রিয়ে ! আমি বহু বিচার করিয়া তাহার তপস্যার সদৃশ ফলদান করিবার জন্য উৎকণ্ঠিত হইয়া উঠিয়াছি । ২৬-২৮

পার্বতী বলিলেন
প্রভো ! হরি প্রসন্ন হইয়া যে এইরূপ চিন্তিত হইলেন, তাহাতে হরিভক্ত ভাবশর্মার কিরূপ ফললাভ হইল ? ২৯

শ্রীমহাদেব বলিলেন
অনন্তর প্রসন্ন মূররিপূর প্রসাদ লাভ করিয়া দ্বিজোত্তম ভাবশর্মা আত্যন্তিক সুখ লাভ করিলেন, তাঁহার কুকর্মপ্রভাবে তদীয় বংশধরগণও যে পূর্বে যাতনা প্রাপ্ত হইয়াছিলেন, তাঁহারাও তদীয় পদবী প্রাপ্ত হইলেন । ৩০-৩১

হে হরিণনয়নে ! এই তোমার নিকট গীতার অষ্টমাধ্যায়ের কিঞ্চিৎ মাহাত্ম্য বর্ণন করিলাম, তুমি ইহা সর্বদা দর্শন করিবে । ৩২


[পদ্মপুরাণ, উত্তর খণ্ড, ১৮২ অধ্যায়]
_________________________________________

চলিত বাংলায় সারাংশ


দক্ষিণ দেশের অমর্ধকপুর শহরে ভবশর্মা নামে এক ব্রাহ্মণ বাস করত । সে এক গণিকাকে বিবাহ করে । মাংসাহার, আসবপান, চৌর্যবৃত্তি, পরস্ত্রী গমন এবং পশু শিকার করে সে জীবন উপভোগ করত । একদিন সেই পাপাসক্ত ভবশর্মা এক ভোজসভায় নিমন্ত্রিত হল । সেখানে অধিক মদ্যপান ও ভোজনের ফলে তীব্র আমাশয় রোগে আক্রান্ত হয়ে অচিরেই সে মরে গেল । মৃত্যুর পর সে একটি খেজুর গাছ হয়ে জন্মাল ।

একদিন এক ব্রহ্ম-রাক্ষস দম্পতি এসে সেই খেজুর গাছের নিচে আশ্রয় নিল । পূর্বজন্মে রাক্ষসটি ছিল কুশিবল বলে এক বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ । তার স্ত্রী, কুমতি, ছিল এক দুষ্প্রবৃত্তিপরায়ণা নারী । ব্রাহ্মণটি পণ্ডিত হলেও লোভী ছিল । স্ত্রীর সঙ্গে সেও প্রতিদিন ভিক্ষা করত, কিন্তু অন্য কোন ব্রাহ্মণকে সে কখনও ভিক্ষা দিত না । মৃত্যুর পর তারা ব্রহ্ম-রাক্ষস হয়ে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হয়ে বিরামহীন ভাবে যত্র-তত্র ঘুরে বেড়াতে লাগল । এইভাবেই খেজুর গাছের নীচে পৌছে তারা বিশ্রাম করতে বসল ।

তখন স্ত্রী তার স্বামীকে জিজ্ঞাসা করল, "কিভাবে আমরা এই ব্রহ্ম-রাক্ষসের অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি পাব ?" স্বামী বলল, "ব্রহ্ম-জ্ঞানের দ্বারা, আত্মজ্ঞানের দ্বারা, ফলপ্রসূ কার্যাবলীর জ্ঞানের দ্বারা । এই সকল জ্ঞান ছাড়া আমাদের পাপময় প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব নয় ।" একথা স্ত্রী জিজ্ঞাসা করল, "কিং তদ্‌ ব্রহ্ম কিম্‌ অধ্যাত্মং কিং কর্ম পুরুষোত্তম - হে স্বামিন্‌, ব্রহ্ম কি, অধ্যাত্ম কি ? ফলপ্রদ কার্য কি ?" সম্পূর্ণ দৈবক্রমে, তার স্ত্রী এই বাক্যের মাধ্যমে শ্রীমদ্ভবদ্গীতার অষ্টম অধ্যায়ের প্রথম শ্লোকের অর্ধাংশ উচ্চারণ করেছিল । যার ফলে ভবশর্মা বৃক্ষরূপ থেকে মুক্ত হল এবং পুনরায় সর্ব পাপ মুক্ত হয়ে ব্রাহ্মণের রূপ পরিগ্রহ করল । সহসা আহাশ থেকে পুষ্প রথ এসে স্বামী-স্ত্রীকে বৈকুণ্ঠে নিয়ে গেল ।

পরে ব্রাহ্মণ ভবশর্মা অতি শ্রদ্ধার সঙ্গে সেই অর্ধ-শ্লোকটি লিপিবদ্ধ করে কাশীপুরী গিয়ে অবিরাম জপ করে অচিরে নিজের এবং তার সব পূর্বপুরুষদেরও মুক্ত করলেন ।


_________________________________________
*Hard Copy Source:
"Padmapuran, Uttarkhanda (Bengali)" by Veda Vyas, translated by Sri Tarakanta Debasharrma, Krishnadas Shastri and Sriramdas Shastri, edited by Pandit Panchanan Tarkaratna. Bangabasi-Electro-machine edition, 1915. Published & printed by Sri Natabar Chakraborty for Bangabasi Karyalay, 38/2 Bhabanicharan Datta Street, Kolkata. First Nababharat Edition, 2013 (with identical page layout). Nababharat Publishers, 72 D, Mahatma Gandhi Road, Kolkata-700009. 1062p.

Hard Copy Reference:
"Srimadvagabadgeeta Mahatmya (Bengali)compiled by Sri Sanatangopal Das Brahmachari. 6th Edition, 2014 (First Edition 2005)Printed & published by Bhaktivedanta Book Trust, Mayapur-741313, Nadia, West Bengal, India. © 2014 by Bhaktivedanta Book Trust.

Sanskrit Source
English Translation

[Digitised by scanning (if required) and then by typing mostly in Notepad using Unicode Bengali "Siyam Rupali" font and Avro Phonetic Keyboard for transliteration. Uploaded by rk]

<Previous--Contents--Next>

No comments:

Post a Comment