Friday, August 14, 2015

শ্রীশ্রীগীতামাহাত্ম্যম্‌ (Padmapuran-9)


শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার নবম অধ্যায়ের মাহাত্ম্য

(শ্রীতারাকান্ত দেবশর্মা)*

শ্রীমহাদেব বলিলেন
হে হিমালয়কন্যে ! অতঃপর নবমাধ্যায় বর্ণন করিতেছি, তুমি আদরসহকারে স্থিরমনা হইয়া শ্রবণ কর । ১

নর্মদাতীরে মাহিষ্মতি নাম্নী নগরী বিদ্যমান, তথায় মাধব নামে মঙ্গলযুক্ত জনৈক দ্বিজ বাস করিতেন । মাধব বেদবেদাঙ্গতত্ত্বজ্ঞ ও সর্বকালে অতিথিপ্রিয় ছিলেন । বিশুদ্ধিবুদ্ধি মাধব একমাত্র বিদ্যা দ্বারা বহুধন উপার্জন করিয়াছিলেন । ২-৩

একদা মাধব এক মহাযজ্ঞ করিবার জন্য উদ্‌যুক্ত হইয়াছিলেন । তিনি যজ্ঞে আলম্ভনার্থ একটী সুলক্ষণ ছাগ আনিয়াছিলেন । ৪

ছাগ জগতের বিস্ময় উৎপাদন করিয়া উচ্চ হাস্য সহকারে বলিল, -
জন্মমরণের হেতুভূত, বিনিশ্বরফল, বিধিবিহিত বহু যাগ করিয়া কি হইবে ? হে বিপ্র ! ঐরূপ করিয়া আমার যে দশা হইয়াছে, তাহা দর্শন কর । ৫-৬

যাগমণ্ডপবাসী জনগণ ছাগের অত্যন্ত কূতুহলসমন্বিত তথাবিধ বাক্য শ্রবণ করিয়া বিস্ময় প্রাপ্ত হইলেন । অনন্তর শ্রদ্ধাবান্‌ মাধব বদ্ধাঞ্জলি হইয়া মুদিতনেত্রে প্রণামপূর্বক ছাগকে সাদরে জিজ্ঞাসা করিলেন । ৭-৮

দ্বিজ বলিলেন
তুমি কোন্‌ জাতীয় ? তোমার স্বভাব কিরূপ ? তোমার বৃত্তিই বা কীদৃশ এবং তুমি কোন্‌ কর্মপ্রভাবে ছাগযোনি প্রাপ্ত হইয়াছ, তাহা আমাকে বল ? ৯

ছাগ কহিল
আমি পূর্বে দ্বিজাতিগণের অতি নির্মলকুলে বেদবিদ্যাবিশারদ হইয়া জন্মগ্রহণ করিয়াছিলাম এবং আমি অনেক যজ্ঞক্রিয়া সাধন করিয়াছি । একদা আমার পুত্র পীড়াগ্রস্থ হইয়াছিল, তাহার রোগ শান্তির জন্য আমার গৃহিনী চণ্ডিকার প্রতি ভক্তিনম্র হইয়া আমার নিকট একটী ছাগ প্রার্থনা করিয়াছিল । তার পর মৎপ্রদত্ত ছাগ চণ্ডিকামণ্ডপদ্বারে নিহত হইলে ব্রহ্মবাদিনী ছাগজননী আমাকে অভিশাপ প্রদান করিল । ১০-১২

ছাগজননী অভিশাপ দিল
হে পাপ ! দ্বিজাধম ! অশাস্ত্রীয় যাগ-যোগে আমার পুত্রকে নিহত করিয়াছ, এজন্য তুমি ছাগ যোনি প্রাপ্ত হইবে । ১৩

ছাগ কহিতে লাগিল
হে দ্বিজসত্তম ! আমি সেই পাপবশে যথাকালে কালকবলিত হইয়া অনেক যোনিসন্তাপ-যাতনা ভোগের পর ছাগ হইয়া জন্মগ্রহণ করিয়াছি । পশুযোনিতে জন্ম হইলেও আমার জাতিস্মরত্ব বিলুপ্ত হয় নাই । ১৪-১৫

বিপ্র বলিলেন
তোমার জন্মবৃত্তান্তশ্রবণে মনে আমার কৌতূহলোন্মুখ হইয়াছে, অতএব তোমার জন্মবিষয়ক সমস্ত বিবরণ এই সকল দ্বিজগণসমীপে বর্ণন কর । ১৬

ছাগ কহিল
আমি কোন সময়ে মর্কট হইয়াছিলাম, তৎকালে আহিতুণ্ডিকদিগের শিক্ষানুসারে আমি প্রতিগৃহে নৃত্য দর্শন করিতাম । ক্রীড়ারত বালকেরা আমার নৃত্য দর্শন করিত । একদাকালে ক্রীড়াকালে আমি আমার উদার পুত্রপরিবারদিগকে দর্শন করিয়া লজ্জিত ও জ্রীড়াবিরত হইলাম । তখন আহিতুণ্ডিক রোষারুণিতনয়নে দুঃসহ বর্ত্তুল দণ্ডদ্বারা আমাকে দারুণ প্রহার করিলে, আমি মূর্চ্ছিত হইলাম, আমার শরীর হইতে শোণিতপ্রবাহ ভূতলে পতিত হইল । আমি আর অন্নাহার ও জল পান করিলাম না, পরন্তু পঞ্চত্ব প্রাপ্ত হইলাম । ১৭-২০

তারপর আমি আত্মোদরপরায়ণ কুক্কুর-কলেবর গ্রহণ করি, আমি এই কুক্কুর দেহে গৃহে গৃহে ঘুরিয়া বেড়াইতাম । গৃহস্তেরা পথে যে সকল উচ্ছিষ্ট পরিত্যাগ করিত, তাহাই আমি ভক্ষণ করিতাম । একদা আমি জনৈক গৃহস্থের পাকশালায় প্রবেশ করিয়াছিলাম, আমি বুভূক্ষু, তাই স্থালীস্থাপিত অন্নভক্ষণার্থী হইয়াছিলাম । আমি জনরব আশঙ্কা করিয়া ভয়ে ভূমিতলে গন্ধ গ্রহণ, এবং জনরবে শঙ্কিত হইয়া ভয়ে এক একবার দশদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপণ ও এক একবার পার্শ্বস্থ সেই অন্ন আস্বাদন করিতেছিলাম । আমি এইরূপ করিতে থাকিলে গৃহস্থের বৃদ্ধা গৃহিণী ও তাহার পুত্রগণ আসিয়া আমাকে দেখিয়া ফেলিল, তাহারা আমাকে লগুড়াদি দ্বারা তাড়িত করিল, আমার কটি ভাঙ্গিয়া গেল, আমি বহু শোণিত বমন করিলাম । আমি অতি কষ্টে গৃহের বাহিরে আসিয়া মূর্চ্ছাকুল হইলাম, ক্রিমিকুল কালে আমার সেই ক্ষতস্থানে গর্ত করিল, আমার দেহে দুর্গন্ধ হইল, আমি পঞ্চত্ব প্রাপ্ত হইলাম । ২০-২৫

তারপর আমি জনৈক শৌণ্ডিকের গৃহে এক কদশ্ব হইয়া জন্মগ্রহণ করি, হে বিদ্বন্‌ ! আমি অশ্ব হইয়া কালক্রমে সেই স্থানেই পঞ্চত্ব প্রাপ্ত (জরাক্রান্ত) হই । আমার দেহ জরাক্রান্ত হইলে এবং সমস্ত দন্ত পড়িয়া গেলে একদা শৈণ্ডিক আমাকে বিক্রয় করিবার জন্য এক জনাকুল স্থানে লইয়া আসিল । তৎকালে দ্বারকাযাত্রায় উদ্যত জনৈক গৃহস্থজায়া অল্প মূল্যে অশ্ব ক্রয়ের চেষ্টা করিতেছিল; আমি জরাক্রান্ত, তাই সে আমাকে অল্প মূল্যে সংগ্রহ করিল । তারপর সে দুই তিনটী তনয়ের সহিত আমার পৃষ্ঠে আরোহণ করিয়া গমনে প্রবৃত্ত হইল । আমি ধীরে ধীরে চলিতে লাগিলাম, কিছু দূর গিয়াই এক সরোবরের গাঢ় কর্দমে নিমগ্ন হইলাম । আমি গ্রীবা কুটিল করিয়া উঠিতে চেষ্টা করিলাম বটে, কিন্তু উঠিতে পারিলাম না, কর্দমান্তরে গিয়া পতিত হইলাম । গৃহস্থ জায়ার পুত্রগণ আমাকে উঠাইবার জন্য বারম্বার লগুড় উপলখণ্ডাদি দ্বারা তাড়ন করিল, তাহাতেই আমি মৃত্যুগ্রস্ত হইলাম । অনন্তর তাহারা আমাকে মৃত জানিয়া নির্বোধ জননীর প্রতি আক্রোশপূর্বক ভগ্নমনে গৃহে ফিরিয়া আসিল । ২৬-৩২

অতঃপর এইরূপে বহু জন্ম-মরণের পর বহুকালে আমি ছাগত্ব প্রাপ্ত হইয়াছি, আমি উচ্চনীচ অনেক যোনিসন্তাপযাতনা ভোগ করিয়াছি । ৩৩

দ্বিজ কহিলেন
হে মহাভাগ ! তবে আর এই নিত্য দুঃখসাধ্য কার্য্য করিয়া কি হইবে ? যাহা দ্বারা সত্বর আত্যন্তিক সুখ লাভ হয়, তাহাই করা কর্তব্য । ৩৪

ছাগ কহিল
হে দ্বিজ ! আপনি স্বাস্থমনা জিজ্ঞাসু, এ বিষয়ে যদি আপনার কৌতুক থাকে, তবে পুনরায় অন্য একটী আশ্চর্য্য কথা বলিতেছি । ৩৫

কুরুক্ষেত্র নামে মোক্ষদায়ক এক নগর আছে, সূর্য্যবংশসম্ভব মহীপতি চন্দ্রশর্মা সূর্য্যগ্রহণসময়ে পরম শ্রদ্ধান্বিত হইয়া জনৈক বেদবেদাঙ্গপারগ দ্বিজকে আহ্বান পূর্বক কালপুরুষ দানে উদ্যয় হন । তিনি পুরোহিত সহ পুণ্যজলে স্নার্থ গমন করিলে কালপুরুষ হাসিতে হাসিতে উচ্চ বাক্যে কহিল, - ৩৬-৩৯

কালপুরুষ কহিল
হে দ্বিজ ! সূর্য্যগ্রহণকালে কুরুক্ষেত্রজলে অন্য কেহ অণু পরিমাণ দানও গ্রহণ করেন না, তুমি কি জন্য মহাদান কালপুরুষ গ্রহণ করিতেছ ? তুমি কালপুরুষ দান-গ্রহণ পাপের কারণ জানিয়াও লোভান্ধ মনে এই দান গ্রহণে উদ্যত হইয়াছ ? ৩৯-৪১

এইরূপ জগদ্বিষ্ময়কর বাক্য শ্রবণে দ্বিজ উত্তর করিলেন
এই মহাদান গ্রহণে ভয় কি ? এইরূপ মহাদানরূপ অগাধ পাতকবারিধি হইতে উত্তীর্ণ হইবার উপায়ও আমি বিশেষরূপ অবগত আছি । ৪২-৪৩

অনন্তর মহীপাল স্নান করিয়া সোত্তরীয় বসন পরিধানপূর্বক শুচি ও প্রসন্নমন হইয়া শ্বেত মাল্য ও অনুলেপন ধারণ করিলেন । তারপর নৃপতি পার্শ্ববর্তী পুরোহিতের করকমল অবলম্বন করিয়া এবং তৎকালোচিত জনগণ দ্বারা সেব্যমান হইয়া জলমধ্যে গমনপূর্বক যথোচিত বিধানে সেই দ্বিজকে কালপুরুষ দান করিলেন । ৪৪-৪৬

অনন্তর কালপুরুষের হৃদয় ভেদ করিয়া লোহিত-লোচন জনৈক পাপাত্মা চণ্ডাল নির্গত হইল, তাহার উদয় মাত্রেই তাহাকে নির্দয় বলিয়া অনুমিত হইতে লাগিল । ঐ চণ্ডাল নির্গত হইবামাত্র পরনিন্দারসে মত্ত হইল, তাহাতে নিন্দানাম্নী এক চাণ্ডালী জন্মিয়া কালপুরুষ-গ্রাহী দ্বিজের সমীপে গমন করিল । এইরূপে লোহিতলোচন চণ্ডালযুগল সমুৎপন্ন হইয়া সহসা দ্বিজের অঙ্গে প্রবেশ করিতে উদ্যত হইলে, দ্বিজ হৃদয়মধ্যে মনোনিবেশ করিয়া গীতার নবমাধ্যায় জপ করিতে লাগিলেন । ৪৭-৫০

রাজা দেখিলেন, তিনি মৌনী, তাঁহার দেহ ঈষৎ কম্পমান । যেন অন্তর্নিদ্রিতগোবিন্দ যুক্তপবনকম্পিত ক্ষীরনিধির ন্যায় প্রতীয়মান । অনন্তর গীতাগাথা হইতে সমূদ্ভুত বৈষ্ণব অক্ষরসমূহ দ্বারা পরিপীড়িত হইয়া পাপাশ্রয় চণ্ডালযুগল দ্বিজের পার্শ্ব হইতে পলায়ন করিল, তাহাদের উদ্যম নিষ্ফল হইল । ক্ষিতিবল্লভ এই বৃত্তান্ত প্রত্যক্ষ করিলেন, বিস্ময়ে তাহার লোচনযূগল উৎফুল্ল হইল । ৫০-৫৪

রাজা দ্বিজকে জিজ্ঞাসা করিলেন
হে বিপ্র ! কি করিয়া আপনি এই মহাঘোর বিপদ্‌ হইতে উত্তীর্ণ হইলেন ? আপনি কোন মন্ত্র জপ বা কোন দেবকে স্মরণ করিয়াছিলেন ? এই পুরুষ ও নারীই বা কে, কিজন্যই বা ইহারা আগমন করিয়াছিল ? আবার কিরূপেই বা ইহারা শান্ত হইল ? হে দ্বিজ ! এ সকল আমার নিকট কীর্তন করুন । ৫৫-৫৬

দ্বিজ বলিলেন
ঐ ব্যক্তিদ্বয়ের মধ্যে উৎকট পাপ পুরুষমূর্তি চণ্ডাল এবং নারীমূর্তিময়ী চাণ্ডালী নিন্দা । ৫৭

আমি গীতার নবমাধ্যায় মন্ত্র স্মরণ করিয়াছিলাম, সেই গীতামাহাত্ম্যফল এইরূপই জানিবেন । হে নৃপ ! প্রতিদিন আমি গীতার নবম অধ্যায় জপ করিয়াছি, তাহাতেই আমার কুপ্রতিগ্রহসম্ভূত আপদ্‌ দূরীভূত হইয়াছে । ৫৮-৫৯

অনন্তর রাজা দ্বিজের নিকট গীতার নবমাধ্যায় অভ্যাস করিলেন, রাজা ও দ্বিজ উভয়েই পরমোত্তম নির্বৃতি লাভ করিলেন । ৬০

[পদ্মপুরাণ, উত্তর খণ্ড, ১৮৩ অধ্যায়]
_________________________________________

চলিত বাংলায় সারাংশ


নর্মদা নদীতীরে মাহিষ্মতী নগরে মাধব নামে এক ব্রাহ্মণ বাস করতেন । তিনি বেদের সকল অনুশাসন খুব কঠোরভাবে অনুসরণ করতেন এবং ব্রাহ্মণের সকল সদ্‌গুণের অধিকারী ছিলেন । তাঁর বিশাল পাণ্ডিত্যের জন্য তিনি প্রচুর দান পেতেন । তাঁর এই লব্ধ অর্থের দ্বারা তিনি এক মহা যজ্ঞ শুরু করেছিলেন । যজ্ঞের আহুতি দানের জন্য তিনি একটি ছাগ শিশু কিনলেন । আহুতি দানের প্রস্তুতি কল্পে ছাগটিকে যখন স্নান করানো হচ্ছিল, তখন সকলকে অবাক করে সেই ছাগটি হাসতে শুরু করে দিল । উচ্চ কণ্ঠে ছাগটি বলল, "ওহে ব্রাহ্মণ, যে যাগযজ্ঞ আমাদের জন্ম-মৃত্যুর চক্রে আবদ্ধ করে রাখে, সেই যজ্ঞ সম্পাদন করে কী লাভ ? কত যাগ-যজ্ঞ করেছি, তবুও আমার অবস্থাটা দেখ ।"

উপস্থিত জনতার প্রত্যেকেই ছাগ শিশুর কণ্ঠে এরূপ কথা শুনে কৌতূহলী হল এবং করজোড়ে ব্রাহ্মণটি জিজ্ঞাসা করলেন, "কী করে তুমি ছাগ হয়ে জন্মালে ? পূর্বে তুমি কে ছিলে ?" ছাগটি উত্তত করল, "হে ব্রাহ্মণ, পূর্ব জন্মে আমি এক শুদ্ধ ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিলাম এবং বেদে নির্দেশিত সমস্ত ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান অতি সতর্কতার সঙ্গে উদ্‌যাপন করতাম । একদিন আমার স্ত্রী, সন্তানের রোগারোগ্যের জন্য দূর্গাপূজার বাসনা করলেন । তাই তিনি আমাকে একটি ছাগ শিশু এনে দিতে অনুরোধ করলেন । সেই মতে যখন আমরা দূর্গামায়ের মন্দিরে ছাগ বলি দিলাম, তখন ছাগের মা আমাকে পরজন্মে ছাগ হয়ে জন্মানোর অভিশাপ দেয় । তাই মৃত্যুর পর আমি ছাগ হয়ে জন্মালাম । তার পরেও আমি কখনও বানর, কখনও কুকুর, কখনো বা অশ্ব যোনিতে জন্মগ্রহণ করে আবার বহুকালে ছাগত্ব প্রাপ্ত হয়েছি । আমি উচ্চনীচ অনেক যোনিতে বহু সন্তাপ ভোগ করেছি । কিন্তু ভগবান বিষ্ণুর কৃপায় আমি আমার পূর্বজন্মগুলির কথা স্মরণ করতে পারি ।"

একথা শুনে ব্রাহ্মণ বলল, "তবে আর এই যাগ-যজ্ঞ করে কি হবে ? যা দিয়ে আত্যন্তিক সুখ লাভ হয় তাই করা কর্তব্য ।" ছাগ বলল, "আপনার যদি এ বিষয়ে উৎসাহ থাকে তবে আপনাকে অন্য একটি আশ্চর্য্য কথা শোনাব ।"

একদা কুরুক্ষেত্রে চন্দ্রশর্মা নামে এক সূর্যবংশীয় এক রাজা সূর্যগ্রহণের সময় এক বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণকে কালপুরুষ নামক মহাদান করতে মনস্থ করলেন । কালপুরুষ তখন হাসতে হাসতে ওই ব্রাহ্মণকে বলল, "গ্রহণের সময় কুরুক্ষেত্রে কোন দান গ্রহণ করা পাপ জেনেও তুমি লোভের বশে আমাকে গ্রহণ করতে ইচ্ছুক কেন ?" ব্রাহ্মণ বললেন, "এই মহাদান গ্রহণে ভয় নেই আমার কারণ অনেক পাপ থেকে মুক্তির উপায় আমার জানা আছে ।" এরপর রাজা যথোচিত রীতি মেনে ব্রাহ্মণকে মহাদান করা মাত্র কালপুরুষের বুক ফেটে এক রক্তচক্ষু পাপাত্মা চণ্ডাল বেরিয়ে আসল । সেই চণ্ডাল বাইরে বেরিয়েই পরনিন্দায় মেতে উঠল, যার ফলে নিন্দা নামে এক চণ্ডালীরও জন্ম হল । এইভাবে দুই চণ্ডাল ব্রাহ্মণের দিকে এগিয়ে গিয়ে তার শরীরে প্রবেশ করতে উদ্যত হল । অবিচলিতভাবে সেই ব্রাহ্মণ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার নবম অধ্যায় জপ করতে লাগলেন । সঙ্গে সঙ্গে বিষ্ণুদূতগণ সেখানে উপস্থিত হয়ে ওই দুই চণ্ডালকে তাড়িয়ে দিল ।

বিস্মিত রাজা চন্দ্রশর্মা ব্রাহ্মণের কাছে জানতে চাইলেন, "কি করে আপনি এই ঘোর বিপদ থেকে পরিত্রান পেলেন ? এই পুরুষ ও নারীই বা কে ?" ব্রাহ্মণ উত্তর করলেন , "চণ্ডালের মূর্তি ধারণ করে পাপ এবং চণ্ডালিনীর মূর্তি ধারণ করে নিন্দা উপস্থিত হয়েছিল । সেই সময় আমি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার নবম অধ্যায় জপ করছিলাম, কারণ এটি সকল ভয়ঙ্কর অবস্থা থেকে কাউকে মুক্ত করতে সক্ষম ।" একথা শুনে রাজা সেই ব্রাহ্মণের কাছে গীতার নবমাধ্যায় অভ্যাস করা শিখলেন এবং অচিরে রাজা ও ব্রাহ্মণ উভয়েই পরমোত্তম নির্বতি লাভ করলেন ।

_________________________________________
*Hard Copy Source:
"Padmapuran, Uttarkhanda (Bengali)" by Veda Vyas, translated by Sri Tarakanta Debasharrma, Krishnadas Shastri and Sriramdas Shastri, edited by Pandit Panchanan Tarkaratna. Bangabasi-Electro-machine edition, 1915. Published & printed by Sri Natabar Chakraborty for Bangabasi Karyalay, 38/2 Bhabanicharan Datta Street, Kolkata. First Nababharat Edition, 2013 (with identical page layout). Nababharat Publishers, 72 D, Mahatma Gandhi Road, Kolkata-700009. 1062p.

Hard Copy Reference:
"Srimadvagabadgeeta Mahatmya (Bengali)compiled by Sri Sanatangopal Das Brahmachari. 6th Edition, 2014 (First Edition 2005)Printed & published by Bhaktivedanta Book Trust, Mayapur-741313, Nadia, West Bengal, India. © 2014 by Bhaktivedanta Book Trust.

Sanskrit Source
English Translation

[Digitised by scanning (if required) and then by typing mostly in Notepad using Unicode Bengali "Siyam Rupali" font and Avro Phonetic Keyboard for transliteration. Uploaded by rk]

<Previous--Contents--Next>

No comments:

Post a Comment