Tuesday, August 18, 2015

শ্রীশ্রীগীতামাহাত্ম্যম্‌ (Padmapuran-13)


শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার ত্রয়োদশ অধ্যায়ের মাহাত্ম্য

(শ্রীতারাকান্ত দেবশর্মা)*

পার্বতী বলিলেন
আপনি দ্বাদশাধ্যায়মাহাত্ম্য আমার নিকট কহিলেন, সম্প্রতি অতিসুন্দর ত্রয়োদশাধ্যায়মাহাত্ম্য বর্ণন করুন । ১

মহাদেব কহিলেন
হে শিবে ! মাহাত্ম্যসাগর ত্রয়োদশাধ্যায় শ্রবণ কর, ইহা শ্রবণমাত্রেই অতিমাত্র আমোদ প্রাপ্ত হইবে । ২

দক্ষিণাপথে মহানদী তুঙ্গভদ্রা বিদ্যমানা, তুঙ্গভদ্রাতটে হরিহরপুর নামে রম্য নগর বিরাজিত । হে দেবী ! হরিহরপুর নগরে স্বয়ং ভগবান্‌ হরিহর অবস্থিত, তাঁহার দর্শনমাত্রেই পরম মঙ্গল লাভ হয় । ৩-৪

ঐ নগরে তপঃস্বাধ্যায়নিরত বেদপারগ শ্রোত্রিয় হরিদীক্ষিত নামক জনৈক দ্বিজ বাস করিতেন । তাঁহার পত্নীর নাম দুরাচারা । দুরাচারা নামে ও কার্য্যেও দুরাচারা । স্বৈরচারিণী দুরাচারা কদাচ পতির সহিত শয়ন করিত না এবং ক্ষণকালও গৃহে থাকিত না । দুরাচারা পতির সম্মুখে আকণ্ঠ বারুণী-মদ্যপান করিয়া পতিসম্বন্ধী বান্ধবগণকে নিরতিশয় তিরস্কার করিত এবং সর্বদা উন্মত্ত হইয়া উপপতিদিগের সহিত রত থাকিত । ৫-৮

নিজ যৌবনগর্বিতা ধুর্তা দুরাচারা একদা পৌরগণ কর্তৃক পুর ইতস্ততঃ সমাকুল অবলোকন করিয়া নির্জন কান্তারে এক সঙ্কেত গৃহ নির্মাণ করিয়া তথায় উপপতিগণের সহিত রতিক্রিয়ায় বহুকাল অতিবাহিত করিতে লাগিল । অনন্তর নির্বিঘ্নে সেই রমণী রম্য হরিহরপুরে এই ভাবে বাস করিতে থাকিলে একদা মদনসখা বসন্ত কাল আসিয়া সমুপস্থিত হইল, তখন আম্র বৃক্ষের আমূল পল্লবে সমাকীর্ণ হইল, পিকগণের পঞ্চমালাপে মৃত মদন যেন পুনর্জীবন পাইল, প্রফুল্ল চম্পক কুসুমের সুরভি হার পরিধান করিয়া মলয়মারুত মন্দ মন্দ প্রবাহে বনদ্রুম আন্দোলিত করিল এবং উৎফুল্ল মল্লিকা কুসুমের আমোদ-মদিয়া-পানাকুল অলিকুলের কলটঙ্কারে কাননের সর্বস্থান শোভিত হইতে লাগিল । সুগন্ধি সরোবরসমূহের প্রসন্ন ও মনোজ্ঞ গন্ধে বসন্তের বিকাশ হইল, চঞ্চল মরালমালাকুল সরোবরসমূহ দ্বারা বসন্ত আত্মবিকাশ করিল । হরিণগণ স্ব-স্ব শিশু সঙ্গে লইয়া বনের ঘনচ্ছায়ায় সুখে সমাসীন হইল এবং ঘনপল্লবশালী শাখিসমূহে কানন নিরতিশয় সমৃদ্ধ হইয়া উঠিল । ৯-১৬

এবংবিধ বসন্ত সময়ের নিশীথে সেই প্রমুদিতা অভিসারিকা রমণী অবলোকন করিল - জগদানন্দদায়িনী চন্দ্রিকা সমুদিতা হইয়াছে, চকোরের চঞ্চুর অগ্রে হিম পতিত হইয়াছে, সেই হিম চকোরচঞ্চুর অগ্রভাগ হইতে পীযুষ-শীকরাকরে গলিত হইতেছে । শিলা সকলের উপর হিমবিন্দু পতিত হইয়াছে, সেই বিন্দু গাঢ় সুধানির্ঝরাকারে গলিয়া পড়িতেছে এবং বিকশিত কুসুমের ক্রোড়ে শিশিরসমূহ পতিত হইয়া ঘনীভূত হইয়া রহিয়াছে । আকাশতল যেন উল্লাসিত জলরাশির কল্লোলে আলিঙ্গিত রহিয়াছে । সেই চন্দ্রিকা মদনের মহা খড়্গরূপিনী, যেহেতু কুলটাগণের কণ্ঠ কর্তনে উহা যোগ্য । পরার্থসাধিনী হিমগর্ভিনী জ্যোৎস্না ঘনান্ধকারনিকর বিদারণ করিয়া নিজ পটুতা প্রদর্শন করিতেছে, সতী রমণীর হৃদয় স্বচ্ছ করিয়া দিতেছে এবং দুঃখিত জনের হৃদয়ে আনন্দ প্রদান করিতেছে । নলিনী মলিনা হইয়া সঙ্কুচিত হইতেছে । চক্রবাক চক্রবাকীর বক্ত্র ধারণ করিয়া করুণক্রন্দনপূর্বক বসন্তের যে প্রভাব বুঝাইয়া থাকে, বসন্তজ্যোৎস্না তাহার সাক্ষ্য প্রদান করিতেছে এবং মুক্তাপঙ্‌ক্তির অমল কিরণে দিগন্ত উদ্‌ভাসিত হইয়াছে । ১৭-২২

অনন্তর এইরূপে সেই জ্যোৎস্না প্রভূত প্রভায় দশদিক্‌ উদ্‌ভাদসিত করিলে কামিনী কামান্ধ হইয়া পথমধ্যবর্তী সৌধে বিহার করিতে লাগিল, কিন্তু সে রাত্রিতে তাহার উপপতিরা আসিল না; কামিনী উপপতিগণকে অনাগত দেখিয়া গৃহের অর্গল খুলিয়া নির্গত হইল এবং ক্রমে সেই নগরবহিস্থ সঙ্কেতগৃহে গমন করিল । কামমোহিতমনা ঐ কামিনী সে স্থানে উপস্থিত হইয়া কোন প্রিয়তমকে দেখিতে পাইল না; সে কুঞ্জে কুঞ্জে বনে বনে অন্বেষণ করিয়াও কাহাকেও দেখিল না, কেবল পদে পদে প্রিয়কান্তের মন্দালাপ তাহার কর্ণে প্রবেশ করিতে লাগিল । সে কখন কিছুদূর গমন ও কখন বা নিজে নিজে ক্রীড়া করিতে থাকিলে এক মনোহর রব তাহার শ্রুতিগোচর হইল, চক্রাবাকরব শ্রবণে সে কান্তরবভ্রমে মুহুর্মুহু সরোবরে পর্য্যটন করিল; আবার আমি আসিয়াছি বলিয়া তরুতলপ্রসুপ্ত হরিণগণকে পতিভ্রমে উচ্ছ্বাসসহকারে প্রবোতিত করিতে লাগিল । প্রাণেশ্বর মনে করিয়া স্থাণূকে আলিঙ্গন ও নিজ কান্তের মুখভ্রমে বিকসিত কমলে চুম্বন করিল; কিন্তু পদে পদে প্রিয়ের অদর্শনে ব্যররথমনোরথ হইয়া শ্রান্ত হইল এবং বিবিধ বাক্যে বিলাপ করিয়া সেই বনে মূর্চ্ছিতপ্রায় হইয়া পড়িল । ২৩-৩০

কামিনী কহিল
হা কান্ত ! আমি তোমার গুণে আক্রান্ত, তুমি আমার চৈতন্যনায়ক । হে মনোহর; হে সৌভাগ্য ! হে ভাগ্যলাবণ্যনিধি ! হায় হায় পূর্ণ চন্দ্রের ন্যায় তোমার বদন, নলিনীর ন্যায় তোমার নয়ন । হা কান্ত ! তুমি তপ্ততাপনাশে কল্পতরুতুল্য, যদি কোনরূপ রোষবশে গুপ্তবেশে এখানে থাক তবে হে কান্ত ! প্রিয় প্রাণের অন্ত করিয়াও তোমায় প্রসন্ন করিতেছি । ৩০-৩৩

সেই বিরহিণী সর্বদিকে এইরূপ উচ্চ বিলাপবাণী উচ্চারণ করিতে লাগিল । তাহার বাক্য শুনিয়া এক সুপ্ত শার্দুল প্রবুদ্ধ হইল, ব্যাঘ্র ঘুর্‌ ঘুর্‌ শব্দ করিয়া রোষবশে সকল দিক্‌ নিরীক্ষণ করিতে লাগিল; সে নখনিকর দ্বারা ভুমিতলে আস্ফালন করিয়া মেঘগর্জনে গর্জিয়া উঠিল, পৃষ্ঠদেশে লাঙ্গুল তুলিয়া বেগভরে সত্বর উঠিয়া পড়িল এবং সেস্থানে সেই অভিসারিকা অবস্থিত ছিল, লম্ফ প্রদানপূর্বক তথায় পতিত হইল । ৩৪-৩৬

অনন্তর পতিভ্রমে প্রেমনির্ভরমনা অভিসারিকাও শার্দুলকে সমাগত দেখিয়া তাহার সম্মুখে উপস্থিত হইল । অনন্তর এই অসতী কামিনী ক্রূর ব্যাঘ্রের নখক্রীড়ায় অন্ধ হইল, এবং ঊর্জিত গর্জন শুনিয়া প্রিয়শরীর-ভ্রমও পরিহার করিল । ৩৬-৩৭

সেই নারী সেই অবস্থায়ও ভ্রান্তি পরিহার করিয়া সত্বর ব্যাঘ্রকে বলিল
হে ব্যাঘ্র ! কিজন্য তুমি আমাকে নিহত করিতে এখানে আগমন করিয়াছ ? কেন তুমি আমার বধার্থী হইয়াছ ? এ সকল আমাকে বল । ৩৮-৩৯

চণ্ডবিক্রম ব্যাঘ্র নারীর এইরূপ প্রশ্নশ্রবণে ক্ষণকালের জন্য ভক্ষণে বিরত হইয়া যেন হাসিতে হাসিতে উত্তর করিল, - ৪০

দক্ষিণদেশে মলাপহানাম্নী এক নদী আছে, তাহার তটে মুনিপর্ণানাম্নী নগরী বিরাজ করে । সেখানে সাক্ষাৎ পঞ্চলিঙ্গ মহেশ্বর বিরাজ করেন । সেই মুনিপর্ণা পুরীতে আমি জনৈক দ্বিজতনয় হইয়া জন্মগ্রহণ করিয়াছিলাম, আমি অযাজ্য যাজন ও সেই নদীতটে একোদ্দিষ্টের অন্ন ভক্ষণ করিতাম । আমি লোভবশে ধনাকাঙ্খায় বেদপাঠফল বিক্রয় করিতাম, দুর্বাক্য দ্বারা অপরাপর ভিক্ষুকগণকে তিরস্কার করিতাম, অদেয় ধন গ্রহণ করিতাম এবং ক্ষণকাল পরে প্রত্যর্পণ করিব বলিয়া অনিশ সকলকে বঞ্চিত করত তাহাদের ধন গ্রহণ করিয়া প্রত্যর্পণ করিতাম না । অনন্তর কিয়ৎকাল অতীত হইলে আমার বার্ধক্য উপস্থিত হইল, আমি বলীপলিতবান্‌ ও অন্ধ হইলাম, আমার গতি স্খলিত হইল, আমি চলিতে গিয়া পড়িয়া যাইতে লাগিলাম এবং আমার দন্ত পড়িয়া গেল । এইরূপ বার্ধক্য দশায় উপনীত হইয়া আমি ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করিলাম । করে কুশ ধারণ করিয়া তীর্থসন্নিধানে সমাগত হইলাম, এবং ধনপ্রাপ্তির আশায় পর্বে পর্বে পরিভ্রমণ করিয়া শিথিলাঙ্গ হইলাম । অনন্তর আহারার্থ প্রার্থনা করিবার জন্য জনৈক ব্রাহ্মণের গৃহে গমন করিলাম, পথমধ্যে আমার পদে কুকুর দংশন করিল, আমি মুর্ছিত হইয়া ক্ষণকালমধ্যে ক্ষিতিতলে পতিত হইলাম । তারপর আমি পঞ্চত্ব প্রাপ্ত হইয়া শার্দুলযোনি লাভ করিলাম । ৪১-৪৯

আমি পূর্বপাপ স্মরণ করিয়া এই কান্তারে বাস করিতেছি । আমি ধার্মিক, সাধু, সতী ও মুনিজনকে ভক্ষণ করি না কিন্তু পাপী, দুরাচার ও অসতীদিগকে ভক্ষণ করিয়া থাকি । তুমি যথার্থ অসতী । তাই তুমি আমার কবলিত হইবে । শার্দুল এইরূপ বলিয়া ক্রূর নখর দ্বারা তাহার দেহ খণ্ড খণ্ড করিয়া খাইয়া ফেলিল । ৫০-৫২

ব্যাঘ্রভক্ষিত হইয়া সে পাপ-দেহ ধারণ করিলে যমদূতেরা তৎক্ষণাৎ যমপুরে লইয়া গেল এবং যমের আদেশে সত্বর বিষ্ঠামূত্র ও রক্তপূর্ণ ঘোর নরকে তাহাকে অনেকবার পাতিত করিল । অনন্তর কোটিকল্পকাল বিষ্ঠামূত্রাদি পানের পর যমকিঙ্করেরা তাহাকে তথা হইতে আনয়ন করিয়া শত মন্বন্তর পর্য্যন্ত রৌরব নরকে রাখিয়া দিল । তারপর ঐ ভগ্নদেহা মুক্তকেশা সর্বতোমুখ-রোদনপরায়ণা দীনা পাপিনীকে বহ্নিমুখে নিক্ষেপ করিল । অনন্তর এবংবিধ ক্লেশসঙ্কুল ঘোর নরকযাতনা ভোগ করিয়া ঐ মহাপাপা ইহলোকে পুনরায় চণ্ডালযোনিতে জন্মগ্রহণ করিল । অতঃপর শ্বপচগৃহে দিনে দিনে বর্ধমানা হইয়া সে পূর্বপাপবশে পূর্বের ন্যায় ব্যভিচারিণী হইল । ৫২-৫৮

অনন্তর কতিপয় কাল অতীত হইলে যেস্থানে শিবের অন্তঃপুরেশ্বরী জৃম্ভকা দেবী অবস্থিতা ছিলেন চণ্ডালী তথায় উপস্থিত হইল । সেস্থানে বসুদেব নামক জনৈক শুদ্ধচেতা দ্বিজ নিরন্তর গীতার ত্রয়োদশাধ্যায় পাঠ করিতেন, চণ্ডালী তাঁহাকে দর্শন ও তাঁহার মুখে গীতাধ্যায় শ্রবণ করিবামাত্র চণ্ডালদেহ হইতে মুক্ত হইল এবং দিব্যদেহ প্রাপ্ত হইয়া ত্রিদশালয়ে গমন করিল । ৫৮-৬১

[পদ্মপুরাণ, উত্তর খণ্ড, ১৮৭ অধ্যায়]
_________________________________________

চলিত বাংলায় সারাংশ


দক্ষিণ ভারতে তুঙ্গভদ্রা নদীর তীরে হরিহরপুর নামে এক সুন্দর শহর আছে । সেখানে হরিহর নামে শিবের এক বিগ্রহ পূজিত হয়ে থাকেন, যাঁর দর্শনে কল্যাণকারী বস্তু লাভ হয় ।

এই হরিহরপুরে হরিদীক্ষিত নামে এক সরল, অনাড়ম্বর জীবন যাপনকারী এক পণ্ডিত ব্রাহ্মণ বাস করতেন । কিন্তু তাঁর স্ত্রী ছিল অতি দুরাচারী । সব সময় সে তার স্বামীকে কটু কথা বলত; স্বামীর বন্ধুদের সাথে রূঢ় ব্যবহার করত; আর পর পুরুষের সাথে কাম পিপাসা চরিতার্থ করত । এ ছাড়াও সে বিভিন্ন রকমের মাদকাসক্ত ছিল । তার প্রেমিকদের সাথে অবাধ মেলা-মেশার জন্য সে বনের মধ্যে নির্জনে এক কুটির বানিয়েছিল ।

একদিন রাত্রিতে সে খুবই কামার্ত হয়ে সেই কুটিরে গিয়ে কোন প্রেমিককে না পেয়ে বনের মধ্যে ইতস্তত ঘুরে বেড়াতে লাগল পুরুষের সন্ধানে । সেই সময় এক বাঘ এসে তাকে হত্যা করতে উদ্যত হলে কামার্তা নারীটি বাঘটির কাছে জানতে চাইল কেন সে তাকে মারতে চাইছে ।

বাঘের কথা
দক্ষিণ দেশে মালাপহা নদীর তীরে মুনিপূর্ণ নামে এক শহর আছে । সেখানে পঞ্চলিঙ্গ নামে ভগবান শিবের এক বিখ্যাত বিগ্রহ আছে । সেই শহরে, এক ব্রাহ্মণ পরিবারে আমার জন্ম হলেও আমি খুবই লোভী ছিলাম । নিজের ইন্দ্রিয়ের উপর আমার কোন নিয়ন্ত্রন ছিল না । আমি নদী-তীরে বসে অর্থের লোভে অযোগ্য লোকেরও যজ্ঞ সম্পাদন করে দিতাম; বিষয়ী লোকদের বাড়িতেও আমি আহার করতাম; যজ্ঞ ও বিগ্রহ অর্চনার নামে আমি প্রয়োজনাতিরিক্ত অর্থ সংগ্রহ করতাম এবং নিজের ইন্দ্রিয়-সুখের জন্য সেই অর্থ ব্যয় করতাম । আমি সাত্ত্বিক ব্রাহ্মণদের নিন্দা করতাম এবং কাউকে কখনও দান দিতাম না । ক্রমে আমি বৃদ্ধ হলাম - চুল পেকে গেল, দাঁত পড়ে গেল, দৃষ্টিশক্ত কমে গেল - কিন্তু তবুও আমার লোভ ও লালসার নিবৃত্তি হল  না । একদিন আমি ভুল করে কতগুলি শঠ ও নিষ্ঠুর ব্রাহ্মণের বাড়িতে খাদ্য ভিক্ষা করতে গেলে তারা আমার ওপর কুকুর লেলিয়ে দিল । কুকুরের কামড় খেয়ে আমি পড়ে গিয়ে মরে যাই । তারপর থেকে আমি এই বাঘের দেহ লাভ করে এই বিপদসঙ্কুল বনে বাস করছি । আমার পূর্বজন্মের স্মৃতি লুপ্ত না হওয়ায় এই জন্মে আমি কোন ভক্ত, সন্ন্যাসী বা সাধ্বী নারীকে আক্রমণ করি না । শুধু পাপাত্মা ও অসতী নারীদের খাই । তুই হলি সবচেয়ে অসতী ও পাপী নারী । তাই তোকে দিয়েই আমার দুপুরের খাবার হবে ।"

কাহিনী শেষ করেই বাঘটি সে নারীকে খেয়ে ফেলল । এরপর যমদূতেরা তাকে 'দুয়াড়' নামক নরকে (মল, মূত্র ও রক্তের সরোবরে) নিক্ষেপ করল ।  দশ কোটি কল্প 'দুয়াড়' নরকের পর একশ মন্বন্তর 'রৌরব' নরকে তাকে থাকতে হয় । এরপর সে চণ্ডালিনী হয়ে মর্তে জন্মে আবার সেই পাপ-পথে জীবন যাপন করে । এই পাপের ফলে তার কুষ্ঠ ও যক্ষা রোগ হয় ।

ভাগ্যক্রমে আর একবার সে হরিহরপুরের তীর্থে যায় । অম্বিকাদেবীর (পার্বতী) মন্দিরের কাছে সে মহামুনি বসুদেবের নিরত গীতার ত্রয়োদশ অধ্যায় পাঠ শুনে আকৃষ্ট হল । বার বার এই পাঠ শুনে সে তার চণ্ডালিনীর দেহ ত্যাগ করে তার অতীব পাপপূর্ণ কাজের প্রতিক্রিয়া থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হল ।


_________________________________________
*Hard Copy Source:
"Padmapuran, Uttarkhanda (Bengali)" by Veda Vyas, translated by Sri Tarakanta Debasharrma, Krishnadas Shastri and Sriramdas Shastri, edited by Pandit Panchanan Tarkaratna. Bangabasi-Electro-machine edition, 1915. Published & printed by Sri Natabar Chakraborty for Bangabasi Karyalay, 38/2 Bhabanicharan Datta Street, Kolkata. First Nababharat Edition, 2013 (with identical page layout). Nababharat Publishers, 72 D, Mahatma Gandhi Road, Kolkata-700009. 1062p.

Hard Copy Reference:
"Srimadvagabadgeeta Mahatmya (Bengali)compiled by Sri Sanatangopal Das Brahmachari. 6th Edition, 2014 (First Edition 2005)Printed & published by Bhaktivedanta Book Trust, Mayapur-741313, Nadia, West Bengal, India. © 2014 by Bhaktivedanta Book Trust.

Sanskrit Source
English Translation

[Digitised by scanning (if required) and then by typing mostly in Notepad using Unicode Bengali "Siyam Rupali" font and Avro Phonetic Keyboard for transliteration. Uploaded by rk


<Previous--Contents--Next>

No comments:

Post a Comment